ছবি : সংগৃহীত
বিগত যেকোনো ঈদের চেয়ে এবারের কোরবানির ঈদযাত্রা অনেকটাই স্বস্তিদায়ক। পদ্মাসেতু দিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ স্বস্তির ঈদযাত্রা করতে পারছেন। বিশেষ করে খুলনা, বরিশাল বিভাগের মানুষের ঈদযাত্রা যানজট মুক্ত।
এবারের ঈদযাত্রা নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ঈদ উপলক্ষে সড়কে কোনো যানজট নেই, তবে যাত্রী চাপ আছে। গত রোজার ঈদে ফিরতি যাত্রায় দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু দুর্ঘটনা ঘটে, সেজন্য এবার আমরা আরও বেশি সতর্ক রয়েছি। রাস্তায় যেনো যানজট তৈরি না হয় সেজন্য সবার সহযোগিতা দরকার।
তবে একটু ভিন্ন চিত্র দেখা গিয়েছে উত্তরাঞ্চল জেলার সড়ক ও মাহাসড়কে, ঈদযাত্রায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ঈদে গাড়ির চাপ বাড়ায় প্রায় ১৫ কিলোমিটার সড়কজুড়ে যানজট তৈরি হয়েছে। এতে ভোগান্তি বেড়েছে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের যাত্রীদের।
ঢাকা যাত্রাবাড়ী, ফকিরাপুল, কল্যাণপুর, গাবতলী, মহাখালী ও আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ডে দেখে গিয়েছে যাত্রীর চাপ। বাসস্ট্যাান্ডের পাশাপাশি রেল স্টেশন ও লঞ্চঘাটে যাত্রীর চাপ অনেক। ঈদ উপলক্ষে সড়কে বেড়েছে ব্যক্তিগত গাড়ির চাপও ।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ঈদযাত্রায় গাজীপুরের চন্দনা-চৌরাস্তা এলাকায় গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে যানজট। গাড়ি চলছে ধীরগতিতে। যাত্রী ভোগান্তি বেড়েছে ।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বলেছেন, মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে র্যাব। প্রতিটি স্টেশনে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। মোবাইল ট্র্যাকিং চালু রাখা হয়েছে। বাস টার্মিনাল, লঞ্চ টার্মিনাল, রেলস্টেশনে আমাদের টিম কাজ করছে। টিকিট কালোবাজারি চক্রের বিরুদ্ধে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। এ বছরের পর এগুলো (কালোবাজারি) আর থাকবে না। যেকোনো ধরনের অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
যাত্রীদের অনুরোধ করে তিনি বলেন, আপনাদের কোনো অভিযোগ থাকলে র্যাবকে জানান, তারা দ্রুত এই ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। র্যাব আপনার পাশেই আছে।
আরাফাত ইসলাম বলেন, যাত্রীদের হয়রানি বিশেষ করে নারী হয়রানি, বিভিন্ন অজ্ঞানপার্টি, মলম পার্টির বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে।
কোরবানির ঈদের চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, রোজার ঈদে একমুখী চাপ থাকে। কিন্তু কোরবানির ঈদে সাধারণত যেটা ঘটে সেটা হচ্ছে, ঘরমুখো মানুষের চাপ, সড়কে যেমন থাকে তেমনি, পশুবাহী ট্রাক-পিকআপও চলাচল করে। অর্থাৎ মানুষ বাড়ি যায়, গরু আসে। সড়কে দ্বিমুখী চাপ মোকাবিলা করতে হয়। পুরো বিষয় বিবেচনায় রেখে আমরা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও সঠিক রাখার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়ছে। অতিরিক্ত চাপ সামাল দিতে দিনে-রাতে মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। মেঘনা সেতু থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দি মেঘনা-গোমতী সেতু এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা এলাকায় যানজট লাগতে পারে, সেটি চিহ্নিত করে বাড়তি হাইওয়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যানবাহনের পাশাপাশি যাত্রীবাহী বাস ও মোটরসাইকেলের চাপ বেড়েছে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েসহ মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের পদ্মা সেতু টোল প্লাজা এলাকায়।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর লঞ্চের যাত্রী কমেছে। তবে ঈদের সময়ে শেষ বেলায় যাত্রী পাচ্ছে লঞ্চ মালিকরা। নৌপথে ঈদ যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে লঞ্চের কেবিনের চাহিদা বেশি। ডেকে তুলনামূলক যাত্রী কম। যাত্রী বাড়তে থাকায় লঞ্চের সংখ্যাও বাড়িয়েছেন লঞ্চ মালিকরা।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) বোসরা ইসলাম বলেছেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে যাত্রীদের সুবিধার্থে অভ্যন্তরীণ রুটে শিডিউল ফ্লাইটের পাশাপাশি ঈদের আগে ২০টি ও পরে ৯টি অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। যাত্রীদের যানজটমুক্ত ভ্রমণ নিশ্চিত করতে প্রতি বছর ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করে বিমান বাংলাদেশ।
কোরবানির ঈদ উপলক্ষে মানুষের ঈদযাত্রা সুশৃংখল ও ঝামেলাপূর্ণ করতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে ২২টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
২২টি নির্দেশনা হলো:
১. ঢাকা মহানগরে দূরপাল্লা ও আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের বাইরে কোনো পরিবহনই সড়কে থেমে যাত্রী ওঠাবে না। যাত্রীরা টার্মিনালের ভেতরে থাকা অবস্থায় বাসের আসন নিতে পারেন। সংশ্লিষ্ট বাসের প্রতিনিধিদের এ বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। ২. ঢাকা মহানগরে দূরপাল্লা ও আন্তঃজেলার বাসগুলো টার্মিনাল সংলগ্ন প্রধান সড়কের অংশ দখল করে দাঁড়াবে না। ৩. ঢাকা মহানগর থেকে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার যানবাহনগুলোকে অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. আন্তঃজেলা পরিবহনের যাত্রী কিংবা গমনপ্রত্যাশীদের প্রধান সড়কে এসে অপেক্ষা না করে বা দাঁড়িয়ে না থেকে টার্মিনালের ভেতরে অবস্থান করার জন্য আহ্বান জানানো হলো। ৫. ঢাকা মহানগর থেকে দূরপাল্লার ফিটনেসবিহীন ও রুট পারমিটবিহীন বাস বা অননুমোদিত রুটের কোনো বাস চলাচল করবে না। বাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই বিষয়টি কঠোরভাবে মেনে চলবেন এবং কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করবেন। ৬. বাসের ভেতর যাত্রীদের অপরিচিত কারো কাছ থেকে কিছু না খাওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হলো।
৭. সংশ্লিষ্ট যাত্রীরা অবশ্যই যানবাহনে টিকিট বহন করবেন। ৮. আন্তঃজেলা ট্রেনের গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন, যেমন বিমানবন্দর, ক্যান্টনমেন্ট, বনানী, তেজগাঁও, কমলাপুর ইত্যাদি স্টেশনে এবং স্টেশন থেকে যাত্রীরা যেন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারেন, সে বিষয়ে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ সচেষ্ট থাকবে। ৯. ঈদ উপলক্ষে লঞ্চ টার্মিনালকেন্দ্রিক যানজট যেন সৃষ্টি না হয়, সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক বিভাগ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
১০. যাত্রীরা মালামাল নিজ হেফাজতে সাবধানে রাখবেন। ১১. কোনো যানবাহনই ছাদের ওপর যাত্রী বহন করবে না। ১২. যাত্রী তোলার ক্ষেত্রে বাসের চালকরা এমন কোন অসম প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন না যেন সড়কের শৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটে এবং জীবনহানির শঙ্কা থাকে। ১৩. টার্মিনালভিত্তিক কাউন্টারগুলোতে ভাড়ার তালিকা প্রদর্শন করতে হবে। ১৪. মোটরসাইকেল চালক এবং আরোহীরা যেন সর্বদা হেলমেট পরিধান করেন এবং গতিসীমা মেনে চলাচল করেন, বিষয়টি ট্রাফিক পুলিশ নিশ্চিত করবে।
১৫. অনেক সময় টার্মিনাল বা আশেপাশের ফাঁকা জায়গায় খালি ট্রাক বা পিকআপ যত্রতত্র যাত্রী তুলে দূরপাল্লার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার প্রয়াস চালায়। ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ এ বিষয়ে অতীতেও সোচ্চার ছিল এবং সবসময় থাকবে। ১৬. ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত লাভের আশায় রুট পারমিটবিহীন বা অনুমোদনবিহীন আন্তঃজেলা গণপরিবহনগুলো যেন ঢাকা মহানগরের অভ্যন্তরে যত্রতত্র না চলে, বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে মালিক বা শ্রমিক প্রতিনিধির সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা অব্যাহত আছে।
১৭. পবিত্র ঈদুল আজহায় ঢাকা মহানগর থেকে বাইরে এবং বাইরে থেকে ঢাকা মহানগরে জনসাধারণের আসা-যাওয়া অব্যাহত থাকে। এজন্য মহানগরের প্রবেশ-প্রস্থান পয়েন্টে যেন কোনো যানজট তৈরি না হয়, সে লক্ষ্যে প্রতিটি পয়েন্টে হাইওয়ে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট জেলা ও মহানগর পুলিশের সঙ্গে ডিএমপির ট্রাফিক পুলিশের শক্তিশালী সমন্বয় থাকবে। ১৮ পশুবাহী গাড়ি অবশ্যই সিটি করপোরেশনের অনুমোদিত হাটের ভেতর লোড-আনলোড করতে হবে। কোনোক্রমেই হাটের বাইরে অথবা রাস্তায় লোড-আনলোড করা যাবে না।
১৯. গরুর হাটকেন্দ্রিক সুষ্ঠু ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন, হাট ইজারাদার, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করা হবে। ২০. কোরবানির পশুবাহী যানবাহনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, যেন কোনো হয়রানি না হয়। ২১. বাস টার্মিনাল ও গরুর হাটকেন্দ্রিক সার্ভিল্যান্স টিম গঠন থাকবে। ২২. ঈদুল আজহার সাত দিন আগে থেকে গরুর হাটকেন্দ্রিক সার্বক্ষণিক ফোর্স মোতায়েন করা হবে এবং প্রয়োজনে ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হবে।
বাংলাবার্তা/এআর