ছবি : সংগৃহীত
দেশে সম্প্রতি ছাগলকাণ্ডে আলোচিত-সমালোচিত সাবেক জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য ও কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মো. মতিউর রহমান তার ২ স্ত্রী-সন্তানের সম্পদের তথ্য চেয়ে নোটিশ দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (০২ জুলাই) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো পৃথক চিঠিতে এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন।
নোটিশে বলা হয়েছে, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে দুদকের স্থির বিশ্বাস জন্মেছে যে, আপনারা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্বনামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ/সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। নিজ ও আপনাদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তির নামে-বেনামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, দায়-দেনা, আয়ের উৎস ও তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণী কমিশনে দাখিল করবেন।
এ আদেশ পাওয়ার ২১ কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত ছকে সম্পদ বিবরণী দাখিলে ব্যর্থ হলে কিংবা মিথ্যা সম্পদ বিবরণী দাখিল করলে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ৫(২) ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নোটিশ উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগ গত ৩০ জুন দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে মতিউর রহমান, তার স্ত্রী ও সন্তানদের নাম উল্লেখ করে ঢাকা, নরসিংদী ও মুলাদির সাব-রেজিস্ট্রার অফিস ও ভূমি অফিস, রাজউক, জয়েন্ট স্টক কোম্পানিসহ বিভিন্ন দপ্তরে পৃথক পৃথক চিঠি দেওয়া হয়।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, নামে-বেনামে, দেশে-বিদেশে অন্তত কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়ার অভিযোগে ২০০৮, ২০১৩ ও ২০২১ সালে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয় এবং তিনবারই অভিযোগ পরিসমাপ্তি করে তাকে ‘ক্লিন সার্টিফিকেট’ দেওয়া হয়।
মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার থাকাকালে সাইমুম অ্যাসোসিয়েটস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি তিনি আত্মসাৎ করেন। তথ্য গোপন করে তিনি ‘জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন ফর হিউম্যান রাইটস’ (অফিস-৩৪, গ্রীন রোড, নবাব ম্যানশনের পঞ্চম তলা)-এর সদস্য হয়ে ক্ষুদ্র ও অসচ্ছল ব্যবসায়ী কোটায় বাড্ডায় সরকারি ওয়াকফ এস্টেট সম্পত্তি থেকে একটি প্লট নিজ নামে দলিল করে নেন। সাইমুম অ্যাসোসিয়েটসের সম্পত্তি দখলের জন্য প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনামুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের সাজানো মামলা দিয়ে হয়রানি করেন। ভুক্তভোগী এনামুল হকের পরিবার ২০০৭ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে। ওই সংবাদ সম্মেলনে এনামুলের বাবা আব্দুস সালাম, মা রহিমা বেগম, বোন আসমা, ভাই রাশেদুল ও ইলিয়াস উপস্থিত ছিলেন। তারা অভিযোগ করেন, ১০৯ গ্রীন রোডে অর্কিড প্লাজায় এনামুল হকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে নেন মতিউর রহমান, তার ভাই নূরুল হুদা ও ক্যাশিয়ার হাফিজুর রহমান। মতিউরের ছোটভাইয়ের শ্যালক রফিকুল আলম জুয়েলের নেতৃত্বে এনামুলের গোডাউন লুট ও তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। খবর পেয়ে র্যাব গিয়ে তাকে উদ্ধার করেছিল।
দুদক সূত্র জানায়, ঢাকা, সাভার, গাজীপুর, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মতিউরের নামে বাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট, প্লটসহ অন্যান্য স্থাবর সম্পদ রয়েছে। তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ বর্তমানে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান। মতিউর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে, মন্ত্রণালয়ের সচিব ও রাজনৈতিক নেতাদের নাম ভাঙিয়ে অবাধে দুর্নীতি করে আসছেন। সব মিলিয়ে তিনি শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
মতিউর রহমানের নামে আরও অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকার ভাটারা থানাধীন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডি ব্লকের ৭/এ সড়কের ৩৮৪ নং বাড়িতে স্ত্রীর নামে ৫০১ নং ফ্ল্যাট, একই ব্লকের ১ নং সড়কের ৫১৯ নং হোল্ডিংয়ে ৭ তলা বাড়ি, যার আনুমানিক দাম ৪০ কোটি টাকা।
প্রায় ৩০০ বিঘা জমিতে ময়মনসিংহের ভালুকায় রয়েছে জুতার ফ্যাক্টরি। এই ফ্যাক্টরির চেয়ারম্যান তিনি নিজেই। ফ্যাক্টরিতে প্রায় ৪০০ শ্রমিক কাজ করেন।
বাংলাবার্তা/এআর