
ছবি : সংগৃহীত
টানা ১৫ বছরের স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় কালে বৈষম্যের শিকার হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মচারীরা। সেই সাথে কোনো পদোন্নতি পাইনি আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমসের কর্মচারীরা। বিশেষ করে গত কয়েক বছরে কোনো পদোন্নতি দেয়া হয়নি। বিভিন্ন সময় পদোন্নতির উদ্যোগ নেয়া হলেও, সেই ফাইল ঘুরছে বছরের পর বছর।
গত মঙ্গলবার (০৬ আগস্ট) এনবিআর কার্যালয়ে এই বিষয় নিয়ে বর্তমান প্রশাসনের অধীনে পদোন্নতি না পাওয়া পদোন্নতিবঞ্চিদের হট্টগোল করতে দেখা গেছে। একই সঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যানকে ১৩ দফা দাবি সংবলিত খোলা চিঠি দিয়েছেন তারা।
সেই সাথে আয়কর অনুবিভাগের ১০ থেকে ২০ গ্রেডের বৈষম্যের শিকার কর্মচারীরা রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে ৯ দফা দাবি জানিয়েছেন। তবে দুই পক্ষের দাবির মধ্যে প্রধান দাবি ছিল, এনবিআর চেয়ারম্যান প্রশাসন ক্যাডার থেকে নয় আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস ক্যাডার থেকে দিতে হবে। কর্মচারীরা বলছেন, বছরের পর বছর পদোন্নতি নেই। যার ফলে অর্থনৈতিক বৈষম্য ছাড়া সামাজিকভাবে তারা হেয় হচ্ছেন। দ্রুত দাবি আদায় না হলে তারা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার এনবিআরের বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী-কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে এনবিআর চেয়ারম্যানকে খোলা চিঠি দেয়া হয়। যাতে বলা হয়, আমরা এনবিআরের সব কর্মচারী ও কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন থেকে আমাদের বিভিন্ন যৌক্তিক দাবি জানিয়ে ব্যর্থ হয়েছি। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশ্ন এনবিআরে কেন বাহিরের ক্যাডার নিয়ে এসে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিতে হবে? আমাদের শুল্ক ও আবগারি ক্যাডার থেকে দুই বছরের জন্য ও কর ক্যাডার থেকে দুই বছরের জন্য সদস্যদের অল্টারনেটিভ করে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিলে কী সমস্যা? আমাদের কষ্ট তারা বুঝতে পারবেন।
কর্মচারীদের দাবি বাইরের ক্যাডাররা আমাদের কষ্ট বুঝতে চান না। তাদের ইচ্ছেমতো করে আমাদের চালাতে চায়। আমাদের পদোন্নতি হওয়ার কথা ছিল সিরিয়াল অনুযায়ী, অতীতেও হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে এক-দুজন লোকের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ইচ্ছেমতো যাকে-তাকে সামান্য অজুহাতে সিরিয়াল ভঙ্গ করে নিজের পছন্দমতো করে পদোন্নতি ও বদলি করা হচ্ছে। সময়মতো পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে না, ডিপিসি করা হচ্ছে না, পদোন্নতির পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে না, নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না।
১৩ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে এনবিআর চেয়ারম্যান নিয়োগ দিতে হবে শুল্ক, আবগারি ও কর ক্যাডার থেকে; প্রতিটি পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে একচ্ছত্র আধিপত্য আর মানা হবে না। সামান্য ভুলের কারণে সিরিয়াল লঙ্ঘন করে পদোন্নতি বন্ধ করতে হবে; যাদের সিরিয়াল লঙ্ঘন করে পদোন্নতি দেয়া হয়নি, তাদের আগে পদোন্নতি দিতে হবে; প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবাধে অ্যাসোসিয়েশন করতে দিতে হবে এবং অ্যাসোসিয়েশনের যৌক্তিক দাবিগুলো মানতে হবে; নিজস্ব জমিতে অফিস করে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে; যথাসময়ে পদোন্নতি দিতে হবে। ফাইল আটকে মজা নিতে দেয়া হবে না, যথাসময়ে পদোন্নতি পরীক্ষা নিতে হবে, যথাসময়ে ডিপিসি করতে হবে, যথাসময়ে নিয়োগ দিতে হবে, নিয়মমাফিক বদলি ও পদায়ন করতে হবে। কোনো প্রকার বদলি বাণিজ্য মেনে নেয়া হবে না, বদলি ও পদায়নের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী উভয় চাকরিজীবী হলে তাদের সুবিধা মতো জায়গায় বদলি করতে হবে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্তৃক সামান্য কারণে বদলি, খারাপ আচরণ, শোকজ, বরখাস্ত বন্ধ করতে হবে এবং প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারীর অফিসিয়াল অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
কর্মচারীরা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, রাজস্ব বোর্ডের প্রাণস্পন্দন এবং শক্তিশালী হাত আমরা । কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, স্বৈরাচারী শাসকের ঘনিষ্ঠ সহচর এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম ও প্রথম সচিব (কর প্রশাসন) মো. শাহিদুজ্জামানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সুবিধাবাদী এবং কার্যত স্বৈরাচারী কর্মকর্তারা বছরের পর বছর আমাদের চরমমাত্রায় ভীতি প্রদর্শন করে নিয়োগে অনিয়ম, বদলি বাণিজ্য, পদায়ন বাণিজ্য, পদোন্নতি বাণিজ্যসহ অবসরকালীন সুবিধারমতো ক্ষেত্রগুলোয় স্বেচ্ছাচারিত্বের এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। নিজেদের ব্যক্তিগত হীন স্বার্থ বছরের পর বছর ধরে পরিপূর্ণ করে চলেছে। আমাদের কর্মচারীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এনবিআরকে তথা দেশকে বাঁচাতে আমাদের ৯টি দাবি মানতে হবে।
দাবির মধ্যে রয়েছে প্রশাসন ক্যাডার থেকে কোনো কর্মকর্তা প্রেষণে এনবিআরে পদায়ন করা যাবে না; স্বৈরাচারী শাসকের ঘনিষ্ঠ সহচর এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যানকে অবিলম্বে পদ থেকে বরখাস্ত করে কর, শুল্ক ও আবগারি ক্যাডার থেকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিতে হবে; অবিলম্বে স্বৈরাচারী চেয়ারম্যানের দোসর এবং প্রিয়পাত্র প্রথম সচিব (কর প্রশাসন) মো. শাহিদুজ্জামানকে তার পদ থেকে বরখাস্ত করে কর ক্যাডারের কর্মকর্তা পদায়ন করতে হবে; দুই বছর পরপর বদলি বাণিজ্য বন্ধ করে আয়কর আইন, ২০২৩-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এবং আয়কর আদায়ের স্বার্থে অতীতের মতো রাজস্ব বান্ধব এবং প্রযোজ্যতা সাপেক্ষে বদলি করতে হবে; অবৈধ নিয়োগ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে নিয়োগ দেয়া যাবে না; কর্মচারীদের পদায়ন কর্মচারীদের জন্য প্রণীত জ্যেষ্ঠতা বিধিমালা ও আইন অনুযায়ী করতে হবে; আয়কর অনুবিভাগের ১০-২০তম গ্রেডের সব শূন্য পদে পদোন্নতি দিতে হবে এবং সব পদ পদোন্নতিযোগ্য হতে হবে, কোনো পদ ব্লক রাখা যাবে না; কর্মচারীদের নিজ নিজ অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে পরামর্শ করে কর্মচারীদেরর স্বার্থসংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে, অন্যথায় কোনো সিদ্ধান্ত মানা হবে না এবং সর্বশেষে আয়কর অনুবিভাগের সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ের সিদ্ধান্ত শুধু আয়কর বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নেবেন। দাবি আদায় না হলে কর্মচারীরা বিক্ষোভ সমাবেশ, কর্মবিরতি, কলম বিরতি, প্রটোকল পালনে বিরত থাকা থেকে শুরু করে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।
বাংলাবার্তা/এআর