ছবি: বাংলাবার্তা
আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম আদানি এবং তার ভাইয়ের ছেলে সাগর আদানির নামে ঘুষের মামলায় সমন জারি হয়েছে। বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর আমদাবাদে দুজনের বাড়িতেই তা পাঠানো হয়েছে নিউ ইয়র্কের আদালতের মাধ্যমে।আদানি গ্রুপের সঙ্গে বড় চুক্তি বাতিল করেছে কেনিয়া। গ্রুপটি নিজ দেশে ভারতেও মামলায় জড়িয়েছে। অপরদিকে, বাংলাদেশের সঙ্গেও ‘অন্যায় ও অযৌক্তিক চুক্তির’ অভিযোগ আছে গ্রুপটির বিরুদ্ধে। বিষয়টি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘আদানি গ্রুপকে ফ্যাসিস্ট হাসিনা গং নিজেদের স্বার্থে অন্যায় সুযোগ দিয়েছে। হাসিনা গংদের উদ্দেশ্য ছিল- ক্ষমতার বাইরে গেলেও যেন টাকা পাওয়ার রাস্তা বন্ধ না হয়। এই উদ্দেশ্যেই হাসিনা গং এমন অযৌক্তি চুক্তি করেছিল।’
তারা আরও বলছেন, ‘আদানি গ্রুপ বাংলাদেশকে এখন ব্ল্যাকমেইল করার সুযোগ পাচ্ছে। কারণ, গ্রুপটি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশ বেশ বিপাকে পড়তে পারে। তবে, অন্তর্বর্তী সরকার এই সুযোগ বেশি দিন দেবে না। আর বাংলাদেশ আইনি ব্যবস্থায় গেলে এই অযৌক্তি চুক্তি টিকবে না। ফলে ফাঁসবে আদানি গ্রুপ।’
চুক্তি সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘আদানি একাই না, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীরা ফাঁসবে। আদানির জন্য হয়তো বড় ‘শাস্তি’ হবে চুক্তি বাতিল। কিন্তু শেখ হাসিনার জন্য এটা ভয়ঙ্কর হবে। এটা একটা বড় কেলেঙ্কারি হিসাবে নজির স্থাপন করবে। এ নিয়ে মামলা হলে বড় শাস্তি পেতে হতে পারে তাকে।’
আমেরিকার শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক এসইসি-র অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে জানানো হয়েছে, ২১ দিনের মধ্যে জবাব দিতে হবে। না হলে অভিযোগকারীর দাবি অনুযায়ী নির্দেশ দেবে আদালত। গৌতম এবং সাগরকে জবাব পাঠাতে হবে আদালতের মাধ্যমেই।
এ দিকে, ফের অভিযোগ অস্বীকার করে আমেরিকার রিপোর্টের নিন্দা করা হয়েছে আদানি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে। তাদের চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) যুগেশিন্দর রব্বি সিংহ এক্স-এ লিখেছেন, বাজারে নথিভুক্ত গোষ্ঠীর মোট ১১টি সংস্থার একটির বিরুদ্ধেও কোনও অভিযোগ তোলা হয়নি। অভিযুক্ত শুধু আদানি গ্রিন এনার্জির একটি চুত্তি চুক্তি। আইনজীবীদের অনুমোদন পাওয়ার পরে তারা বিশদে আমেরিকার রিপোর্টের ব্যাখ্যা দেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
আমেরিকার বিচার বিভাগীয় আদালত এবং শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রকের অভিযোগ, বাজারের থেকে বেশি দামে সৌর বিদ্যুৎ বিক্রির বরাত পেতে ভারতে অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, ছত্তীসগঢ়, তামিলনাডুর সরকারি আধিকারিকদের ২৬.৫০ কোটি ডলার (প্রায় ২০৩০ কোটি টাকা) ঘুষ দিয়েছেন গৌতম এবং সাগর-সহ ৭ জন। কেন্দ্রীয় সরকারের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা সোলার এনার্জি কর্পোরেশন ঘুষ
দিয়ে বরাত পেতে সাহায্য করেছে। আদানিদের পরিকল্পনা ছিল ২০ বছর ধরে ২০০ কোটি ডলার বা ১৬,৯০০ কোটি টাকার বেশি লাভ ঘরে তোলা। ২০২০-২০২৪ সালে আমেরিকার ব্যাঙ্ক এবং লগ্নিকারীদের কাছে ঘুষের কথা গোপন করে ১২ গিগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ জোগানের জন্য কোটি কোটি ডলার সংগ্রহ করে আদানি গোষ্ঠী। এ জন্য সেখানকার সংস্থার সঙ্গে জোট বাঁধে। গোটাটাই প্রতারণা বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
আদানিরা অবশ্য সব অভিযোগই অস্বীকার করেছে। জানিয়েছে, পুরোটাই ভিত্তিহীন। এর মোকবিলা করতে সব রকম আইনি পদক্ষেপ করা হবে। গোষ্ঠীর তরফে সিংহ বলেছেন, ‘খবরের শিরোনামে এমন বহু বিষয় আসছে, যেগুলি সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক। অভিযোগ বিশদে খতিয়ে দেখার পরে আমরা তার ব্যাখ্যা দেব।’ তার এটাও দাবি, আমেরিকার সরকারি কৌঁসুলিরাই বলেছেন সবটা অভিযোগ এবং তা প্রমাণের আগে কাউকে দোষী বলা যায় না। তার উপর এ ক্ষেত্রে যে অভিযোগ নিয়ে এত জলঘোলা, সেটি আদানি গ্রিনের একটিমাত্র চুক্তিকে ঘিরে। যার সঙ্গে সংস্থার মোট ব্যবসার মাত্র ১০% জড়িয়ে।
কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো ভারতের বিতর্কিত ধনকুবের গৌতম আদানির সঙ্গে হওয়া দুটি বড় চুক্তি বাতিল করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিকিউটররা আদানির বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ আনার পর এই সিদ্ধান্ত এল। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
গত বৃহস্পতিবার ভারতের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, তিনি ২৫ কোটি মার্কিন ডলার ঘুষ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন এবং তা গোপন রেখে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করেছিলেন।
বাংলাবার্তা/এমআর