
ছবি : সংগৃহীত
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মানবপাচারকারী চক্রের দুই চীনা নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন। এসময় সুবর্ণা আক্তার নামে ২১ বছরের এক তরুণীকে উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার দুই চীনা নাগরিক হলেন— ইয়াং জিকু (২৫) ও ফ্যান গোউয়ে (২৭)। তারা চাকরি ও বিয়ের প্রলোভনে ওই তরুণীকে চীনের পাচারের জন্য বিমানবন্দরে নিয়ে আসেন।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) বাংলাবার্তাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার রাকিবুল ইসলাম।
তিনি জানান, মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে আগের দিন সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বিকালে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ।
এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, ‘চাঁদপুর জেলার সুবর্ণা আক্তার (২১) নামে ভুক্তভোগী তরুণীয়র মৌখিক অভিযোগ আমলে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু করে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন। ওই তরুণী পাচারের বিষয়টি বুঝতে পেরে পালিয়ে এয়ারপোর্ট এপিবিএন অফিসে চলে আসেন। তিনি জানান, ফ্যান গোউয়ে নামে চীনা নাগরিক তাকে চীনে পাচারের চেষ্টা করছে। তিনি চীনে যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে এসেছেন।’
সূত্র জানায়, মঙ্গলবার ভুক্তভোগী তরুণী বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
অভিযোগকারীর তথ্যের ভিত্তিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনিতা রানী সূত্রধর ফোর্স নিয়ে বোর্ডিং লাউঞ্জ-৫-এ অভিযুক্ত চীনা নাগরিককে অভিযোগকারীর সহায়তায় শনাক্ত এবং আটক করেন। পরে ইমিগ্রেশন থেকে অফলোডকরণপূর্বক অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত দুজনকেই এয়ারপোর্ট এপিবিএন অফিসে নিয়ে আসা হয়। অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদে ও ভুক্তভোগীর দেওয়া তথ্য থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, নিকুঞ্জের একটি তিনতলা বাড়িতে আরও দেশি-বিদেশি পাচারকারী ও নারী ভুক্তভোগী অবস্থান করছেন।
তথ্য অনুসারে, সোমবার দিনগত গভীর রাতে সিআইডির টিএইচবি সেল, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা ও এয়ারপোর্ট এপিবিএন-এর একটি দল নিকুঞ্জের সেই বাড়িতে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। সেখান থেকে তারা আরেক চীনা পাচারকারী ইয়াং জিকু (২৫) নামক গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বাকিরা পালিয়ে যায়। এসময় পুলিশ পাচারকারী চক্রের গুরুত্বপূর্ণ আলামত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। চক্রটি দীর্ঘদিন মানবপাচারে যুক্ত বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ মিলেছে। চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এপিবিএন সূত্র জানায়, দুই বছর আগে টিপু ও জিহাদ নামে দুজনের সঙ্গে ফেসবুকে ভুক্তভোগীর বন্ধুত্ব হয়। ফেসবুক মেসেঞ্জারে তাদের আলাপ হতো। একপর্যায়ে জিহাদ ভুক্তভোগীকে চাইনিজ কোম্পানিতে চাকরির প্রস্তাব দেয়। তার প্রস্তাবে রাজি হলে টিপু ও জিহাদ গত ২৬ অক্টোবর ভিকটিমের নিজ বাড়ি থেকে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসে। টিপু ও জিহাদ তাকে ঢাকায় খিলক্ষেত থানাধীন নিকুঞ্জ-১, রোড-৯/বি-এর ৮ নম্বর বাড়িতে নূরুর কাছে নিয়ে আসে। এরপর চীনা নাগরিক ইয়াং হওয়ের (৩২) সঙ্গে ভিকটিমের বিয়ের নাটক সাজায় নূরু। ২৬ অক্টোবর ইয়াং হওয়ের সঙ্গে ভুয়া বিয়ে সম্পন্ন হয়। ভুয়া বিয়ের পর তারা নিকুঞ্জের ওই বাড়িতে বসবাস শুরু করে। ওই বাড়িতে আরও ৭-৮ জন চীনা নাগরিক ও নারীকে দেখেছেন বলে ভুক্তভোগী জানান। এর মধ্যে পাচারকারীরা ভুক্তভোগীর পাসপোর্টসহ অন্যান্য কাগজপত্র প্রস্তুত করে এবং তাকে বাসায় আটকে রাখে। ভুক্তভোগীকে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন। গত সপ্তাহে ভুক্তভোগীর কথিত স্বামী 'ইয়াং হও' চীনে চলে যায়। পরে পাচারকারীরা ফ্যান গুয়াই গট-২০৩৬ ফ্লাইটে পাচার করার জন্য গত সোমবার ভুক্তভোগীকে জোরপূর্বক বাসা থেকে হযরত শাহ্জালাল বিমানবন্দরে নিয়ে আসে। বিমানবন্দরে এনে ভুক্তভোগীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সেটিংসের ভাষা চাইনিজে রূপান্তর করে ফেরত দেয়। তখন সুযোগ পেয়ে পালিয়ে ওই নারী এয়ারপোর্ট এপিবিএন অফিসে গিয়ে সাহায্য চাইলে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা ত্বরিত ব্যবস্থা নেন।
এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার অ্যাডিশনাল ডিআইজি শিহাব কায়সার খান বলেন, ‘কয়েকটি দেশের মানবপাচারকারী চক্র এদেশের দালালদের সহযোগিতায় নারী পাচার করছে। তারা গ্রামের সহজ-সরল নারীদের নানান প্রলোভনে পাচারের চেষ্টা করে। এসব তথ্য আমাদের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
বাংলাবার্তা/এমআর