ছবি : সংগৃহীত
মাওলানা সাদপন্থি ও জুবায়েরপন্থিদের সংঘর্ষের টঙ্গীর ইজতেমার ময়দান রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এখন পর্যন্ত উভয় পক্ষের তিন জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) ভোরে ইজতেমা ময়দানের বিদেশি নিবাসের ছাউনীতে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি ইস্কান্দার হাবিবুর রহমান।
নিহতরা হলেন—বগুড়ার তাইজুল ইসলাম; তিনি সাদপন্থি। অপরজন কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়ার আমিনুল ইসলাম বাচ্চু; তিনি জুবায়েরপন্থি। নিহত আরেক জনের পরিচয় মিলেনি।
ওসি ইস্কান্দার বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
আগে থেকে ইজতেমা মাঠে অবস্থান করছিলেন জুবায়েরপন্থি। পরে মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে মাঠে প্রবেশ করেন সাদপন্থীরাও। এ সময় ভেতরে থাকা জুবায়েরপন্থিদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় সাদপন্থীরা। সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত তিনজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জুবায়েরপন্থিরা।
বুধবার সকালে তাবলীগ জামাত বাংলাদেশের (শুরায়ী নেজাম) মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হানের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘গতকাল (১৭ ডিসেম্বর) মাওলানা জুবায়ের সাহেবকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে জানানো হয় যে, আজ (১৮ ডিসেম্বর) বেলা ১২টায় মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার আমাদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে এবং সেই মিটিংয়ে বিশ্ব ইজতেমা মাঠের বিষয়ে সুন্দর একটি সিদ্ধান্ত জানানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরই মধ্যে হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিসসহ কয়েকজন সমন্বয়ক আজ (১৮ ডিসেম্বর) গভীর রাত ২.৩০ মিনিটে কাকারাইল মসজিদে আলোচনার জন্য আসেন। একটু পরেই খবর আসে যে, সাদপন্থীরা সারা দেশ থেকে টঙ্গী ময়দানের পশ্চিম পাশে বেলাল মসজিদে অবস্থান করছে। সেখানে বিভিন্ন সন্ত্রাসী ভাড়া করে এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের নতুন, পুরাতন সাথী জমা করে ধারালো অস্ত্রসহ সশস্ত্র অবস্থায় টঙ্গী ময়দানের ফরেন টেন্ট-এর গেট ভেঙে মাঠের ভেতরে প্রবেশ করে।’
‘এতে অনেক সাথী আহত হন এবং ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহত একজনের নাম আমিনুল ইসলাম বাচ্চু। তিনি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার বাসিন্দা। অপরজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আছেন।’
সকালে ঢামেক হাসপাতালে আরও একজন মৃত্যুবরণ করেছেন উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘বর্তমানে প্রচুর পরিমাণ তাবলীগের সাথী গুরুতর আহত অবস্থায় আহসান উল্লাহ মাস্টার মেডিকেল হাসপাতালে এবং ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন।’
প্রসঙ্গত, মাওলানা সাদ কান্ধলভির বেশকিছু বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। এরপর নানা অসন্তোষের সত্ত্বেও ২০১৮ সালের বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশে আসেন তিনি। তখন এ নিয়ে বাংলাদেশে নানা তর্ক-বিতর্ক তৈরি হয়। মাওলানা সাদকে কোনোভাবেই ইজতেমায় অংশগ্রহনের সুযোগ দেয়া যাবে না বলে দাবি জানান ওলামায়ে কেরাম। এসব দাবির মুখে ইজতেমায় অংশগ্রহণ না করেই কাকরাইল মসজিদ থেকে ভারতে চলে যান তিনি। এরপর থেকে তাকে আর বিশ্ব ইজতেমায় উপস্থিত হতে দেখা যায়নি। যদিও প্রতিবার তাকে ইজতেমায় উপস্থিত করতে চেষ্টার কমতি রাখেন না তার অনুসারীরা। মাওলানা সাদকে ঘিরে বিরোধের কারণে ২০১৮ সাল থেকে আলাদাভাবে দুই পক্ষ তিন দিন করে ইজতেমার আয়োজন করা শুরু করে।
প্রায় এক শতাব্দি আগে মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভি (রাহ.)-এর মাধ্যমে প্রচলিত দাওয়াত তাবলীগের সঙ্গে পরিচয় হয় মুসলমানদের। মহান এ জামাতের মেহনতের মাধ্যমে বহু পথভোলা, অন্ধকার পথের যাত্রী আলোর পথে ফিরে আসে। দাওয়াত ও তাবলীগ মুসলিম ও অমুসলিম সব দেশে সমান তালে কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমআর