ফটো কোলাজ: বাংলাবার্তা
স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা পালানোর পর কয়েকদিন চাঁদাবাজি-দখলবাজি বন্ধ ছিল। সপ্তাহ দুয়েক পর নতুন করে শুরু হয় চাঁদাবাজি-দখলবাজি। এখন রাজধানীসহ সারা দেশেই উৎপাত বেড়েছে আওয়ামী শাসনামলের মতো। নীরব ভূমিকা পালন করছে প্রশাসন। অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। এ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যেও চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীজুড়ে দখলবাজ-চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য বেশি।
রেহাই পাচ্ছে না সরকারি-বেসরকারি কোনো কিছুই। ফুটপাত থেকে শুরু করে ওভারব্রিজ, ফ্লাইওভারের নিচের অংশ, খালের সীমানা, নদীর তীর, পার্কের জায়গা দখল হয়েছে। এমনকি পাবলিক টয়লেটও দখলবাজদের হাত থেকে বাদ পড়েনি।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রাজধানীতে চাঁদাবাজি-দখলবাজির হাত বদল হয়েছে। ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগ নেতাককর্মীরা করত। তারা পালানোর পর এখন বিএনপি নেতাকর্মীরা এসব অপকর্ম করছে। শুধু তাই নয়, জমজমাট মামলা-বাণিজ্যও করছে তারা। দলীয় ভাবমূর্তি রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তাদের লাগাম টানা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একাধিকবার হুঁশিয়ারিও দেন।
বিএনপি শীর্ষনেতারা দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের প্রশ্ন, বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেহেতু এত চাঁদাবাজি-দখলবাজির অভিযোগ, তাহলে পুলিশ কেন তাদের গ্রেপ্তার করছে না।
চাঁদাবাজি-দখলবাজির সঙ্গে বিএনপির কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেন, আমরা আগেও দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারীদের ছাড় দিইনি। যারা দখলদারিত্ব কিংবা চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। যারা এসবের সঙ্গে জড়িত তারা কেউ বিএনপি পরিবারের সদস্য নয়, তারা সুবিধাভোগী। দলের কেউ যদি এর সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমাদের সংগঠন থেকে স্পষ্টভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়েছে, যারা এসবের সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।
দখলদারদের বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, দেশে দখলদারত্ব আগের মতোই আছে, চাঁদাবাজিও আগের মতো, শুধু দখলদার ও চাঁদাবাজ পরিবর্তন হয়েছে। সরজমিন দেখা যায়, কোনো কোনো জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা যায়নি সিটি করপোরেশনের জায়গা। নগরজুড়ে চলমান রয়েছে এই দখলদারদের রাজত্ব।
শনিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে চাঁদাবাজি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, আগামীতে যারা ক্ষমতায় যাবেন, তাদের অনেকেই নির্বাচনের জন্য চাঁদাবাজি করছেন। একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সময়ে সময়ে দু-একজনকে বহিষ্কার করতে দেখা যাচ্ছে। নেতাকর্মীরা চাঁদাবাজি করতে গিয়ে দাবি করছেন, গত ১৫ বছরে তারা ক্ষমতায় ছিলেন না, আর নির্বাচনে অংশ নিতে তাদের টাকার প্রয়োজন।
রাজধানীতে একটি পার্কের জায়গা দখল করে নির্মাণ হচ্ছে রেস্টুরেন্ট। পাবলিক টয়লেট দখল করে নিচ্ছেন পঞ্চায়েত কমিটি এবং রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ। সিটি করপোরেশনের একদিক থেকে উদ্ধার করা জায়গা পুনরায় দখল হচ্ছে। ফুটপাত, ফ্লাইওভারের নিচ এবং ওভারব্রিজ দখল করে চলছে ব্যবসা। খালের জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে ট্রাক স্ট্যান্ড এবং দোকান।
কর্তৃপক্ষ বলছে এসব ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত এবং সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সামনে এ ধরনের কাজ চলতে থাকলে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দখল হয়ে যাওয়া খালের জায়গা পুনরুদ্ধারের বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খাইরুল আলম বলেন, খাল শুধু উদ্ধার করলেই হবে না, এর জন্য আমাদের অনেক পরিকল্পনা আছে। খাল উদ্ধার করে আমরা প্যাকেজ অনুযায়ী কাজ করব। খাল দখলমুক্ত করে আমরা ওয়াকওয়ে, বৃক্ষরোপণসহ খালে নৌকা চলাচলের উদ্যোগ নিয়েছি।
দখল হয়ে যাওয়া পার্কের জায়গা, পাবলিক টয়লেট এবং সিটি করপোরেশনের জায়গা উদ্ধারের বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কাইজার ফারাবী বলেন, দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য আমরা নিয়মিত উদ্ধার অভিযান চালানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো আগের পর্যায়ে আসতে পারেনি। পুলিশ ফোর্স এভেইলেভেল না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গতিশীলতা যত বাড়বে বা যত তাড়াতাড়ি পুলিশ ফোর্স এভেইলেভেল হবে তখন উচ্ছেদ অভিযান চালানো সম্ভব হবে। ফলে কবে নাগাদ দখল হয়ে যাওয়া সিটি করপোরেশনের জায়গা উদ্ধার করা হবে এটা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন।
দখলসহ নানা বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শনিবার পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, অপরাধ কমাতে ব্যবস্থা নিচ্ছি। ঢাকাসহ সারা দেশের পুলিশ সুপারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে পুলিশের প্রতিটি ইউনিটের সদস্যরা কাজ করছেন।
রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে আয়োজিত বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতির অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ঢাকাসহ সারা দেশের পুলিশ সুপারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমাদের কাছে ওইভাবে কোনো ম্যাজিক নেই। আপনারা জানেন কী অবস্থা এবং কোথা থেকে উঠে এসে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। পুলিশ বাহিনীকে জাগিয়ে তোলা, আস্থা ও মনোবল ফিরিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছি।
বাংলাবার্তা/এমআর