
ফাইল ছবি
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় প্রদান এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান দমন-পীড়নের কারণে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তবে, বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে এবং ব্যক্তিগতভাবে শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে পদক ও আন্তর্জাতিক প্রশংসা লাভের আশায়, যা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের জন্য বড় বিপদ ডেকে এনেছে।
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শরণার্থী শিবির কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ এলাকায় রোহিঙ্গাদের অবস্থান শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এখানে ইয়াবা, অস্ত্রের চোরাচালান, সন্ত্রাসী কার্যক্রম এবং নানা অপরাধের ঘটনা নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। কক্সবাজারের স্থানীয়রা এখন নিজ ভূমিতেই উদ্বাস্তু, আর সন্ত্রাসী তৎপরতা বেড়ে চলেছে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির এই সংকটের সমাধানে দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "রোহিঙ্গাদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী কূটনৈতিক উদ্যোগ দরকার, না হলে এটি একটি স্থায়ী সমস্যায় পরিণত হবে।" এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদও একই রকম মত প্রকাশ করেছেন, তিনি বলেন, "এটি আমাদের জন্য একটি বড় সংকট, কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে এর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।"
শেখ হাসিনা যে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার পাওয়ার আশায় ছিলেন, তা সুষ্পষ্ট হয়েছে অনেক বিশ্লেষকের ভাষ্যে। ২০১৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারে এক জনসভায় তিনি বলেছিলেন, "আমরা ১৬ কোটি মানুষকে খাবার দিই, তাই রোহিঙ্গাদের সাহায্য করতেও পারি।" এর মাধ্যমে তিনি রাজনৈতিকভাবে নিজেদের অবস্থানকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, রোহিঙ্গাদের দেশে আশ্রয় দেওয়ার আগে এর সম্ভাব্য পরিণতির বিষয়ে শাসক দলের সতর্কতা প্রয়োজন ছিল। মিয়ানমারের সীমান্তে ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার উপস্থিতি বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য একটি বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা সহ বহু দাতা সংস্থা আর সহায়তা দিতে আগ্রহী নয়, এবং সীমান্তে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান বাড়ছে। এসব পরিস্থিতির ফলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং অর্থনীতি এখন ক্রমেই হুমকির সম্মুখীন।
তবে, রোহিঙ্গাদের স্থায়ী সমাধান এবং দেশে তাদের নিরাপদ পুনর্বাসন সম্ভব হতে পারে, যদি দ্রুত আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান কোনো সহজ কাজ নয়, এবং তা দেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ