
ফাইল ছবি
আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ট্রেনযাত্রীদের জন্য অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এবারের টিকিট বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সাথে সাথেই দেখা যায় অভূতপূর্ব সাড়া।
বুধবার (১৯ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের ই-টিকিটিং ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপে মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যেই ১ কোটি ২৩ লাখ হিট রেকর্ড করা হয়। একই সময়ে সারা দেশে বিক্রি হয়েছে প্রায় ৩৩ হাজার টিকিট।
টিকিট বিক্রির চিত্র: সংখ্যায় চোখ ধাঁধানো রেকর্ড
প্রথম দিনেই ট্রেনের টিকিটের বিপুল চাহিদা দেখা গেছে। সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া টিকিট বিক্রিতে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া পশ্চিমাঞ্চলের আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর জন্য প্রথম ৩০ মিনিটেই বিক্রি হয়েছে ১৪,৪০৫টি টিকিট। অন্যদিকে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনের জন্য বিক্রি হয়েছে ১৮,৫৪৬টি টিকিট।
সকাল ৮টা থেকে ৮:৩০ মিনিট পর্যন্ত সারা দেশে মোট বিক্রি হওয়া টিকিটের সংখ্যা ৩২,৯৫১টি।
ঈদযাত্রার টিকিট: চাহিদার চেয়ে আসন কম
ঈদুল ফিতরের ছুটিতে লাখো মানুষ গ্রামের বাড়ি ফিরতে চায়। তবে ট্রেনের আসনসংখ্যা তুলনামূলক কম থাকায় চাহিদা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
২৯ মার্চের জন্য ঢাকার আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতে মোট আসন ছিল ৩৩,১৯৯টি এবং সারা দেশের সব ট্রেন মিলিয়ে মোট আসন ছিল ১,৭৫,৬৩০টি।
টিকিটের জন্য অসহনীয় প্রতিযোগিতা, প্রযুক্তিগত জটিলতা
অনলাইনে টিকিট কাটার জন্য লাখ লাখ যাত্রী একসঙ্গে চেষ্টা করায় সাইটে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, তারা টিকিট কাটার চেষ্টা করলেও বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন সাইট ধীরগতির, আবার অনেকেই লগইন করলেও পেমেন্ট সম্পন্ন করতে পারেননি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের এক কর্মকর্তা জানান, অনলাইনে টিকিটের চাহিদা সামলাতে সার্ভার আপগ্রেড করা হয়েছে। তবে বিপুলসংখ্যক মানুষ একসঙ্গে সাইটে প্রবেশ করায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।
ঈদযাত্রার টিকিট পেতে করণীয়
যাত্রীরা যেন সহজেই টিকিট পেতে পারেন, এজন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে কিছু নির্দেশনা দিয়েছে:
✅ টিকিট কাটার জন্য আগে থেকে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে তথ্য আপডেট রাখা।
✅ বেশ কয়েকটি ব্রাউজার ব্যবহার করে চেষ্টা করা, যেমন গুগল ক্রোম, মজিলা ফায়ারফক্স ইত্যাদি।
✅ মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েবসাইট দুটো মাধ্যমেই চেষ্টা করা।
✅ রাত ১২টা বা ভোরের দিকে অপেক্ষাকৃত কম লোডের সময় টিকিট কাটার চেষ্টা করা।
ঈদযাত্রায় ট্রেনই প্রথম পছন্দ
যানজট ও দীর্ঘ বাসযাত্রার কষ্ট এড়াতে দেশের বেশিরভাগ মানুষ ট্রেনকেই নিরাপদ মনে করেন। স্বল্প খরচে আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য ট্রেনের চাহিদা অন্য যেকোনো পরিবহনের তুলনায় বেশি। তবে আসনসংখ্যা সীমিত থাকায় সবাই ট্রেনের টিকিট পেতে পারেন না।
অনলাইনে টিকিট ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, অনলাইনে টিকিট বিক্রির হার বাড়াতে আরও উন্নত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বর্তমানে অনলাইনে টিকিট বিক্রি বাড়ানোর পাশাপাশি অপব্যবহার রোধে কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, ঈদযাত্রায় বাড়তি ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে এবং যাত্রীদের যাতে সহজে টিকিট পেতে পারেন, সেজন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশের ট্রেন ভ্রমণ এখনও সবচেয়ে জনপ্রিয় ও নির্ভরযোগ্য পরিবহন ব্যবস্থার মধ্যে অন্যতম। তবে ঈদের সময় টিকিটের অভাব ও প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে যাত্রীরা প্রতিবারই বিড়ম্বনার শিকার হন। এবারের টিকিট বিক্রির চিত্র বলছে, আগামীতে আরও আধুনিক ও শক্তিশালী সার্ভার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি।
তবে টিকিটের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ সীমিত থাকায়, অনেকের জন্য ট্রেনযাত্রা এখনও কেবল স্বপ্ন হয়েই থেকে যায়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ