
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে বিচার বিভাগের কার্যক্রম ও প্রশাসন আরও শক্তিশালী করতে একটি পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে সরকার। এটি হবে 'সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়' নামে পরিচিত এবং এর সার্বিক নিয়ন্ত্রণ থাকবে প্রধান বিচারপতির হাতে। এ বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি খসড়া প্রণয়ন করেছে, যা ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টের মতামত লাভ করেছে এবং চূড়ান্ত আকারে আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো হয়েছে।
খসড়ার উদ্দেশ্য হলো বিচার বিভাগের সুশাসন ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা। এর মধ্যে বলা হয়েছে যে, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় সরকারের কোনো মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা দপ্তরের আওতায় থাকবে না। এটি স্বাধীনভাবে সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকবে এবং বাজেট বরাদ্দ ও ব্যয়ের অনুমোদন দেওয়ার চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ হিসেবে প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব পালন করবেন।
এরই মধ্যে, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫ নামে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা এখন রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য প্রস্তুত। তবে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ নিয়ে কিছু আইনগত জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, যা অধ্যাদেশ জারি করার প্রক্রিয়ায় কিছুটা বাধা সৃষ্টি করছে। সংবিধানের এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিচার বিভাগের কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রপতির হাতে থাকা সত্ত্বেও, বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন যে, বিচার বিভাগ পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠায় কোনো সাংবিধানিক বাধা নেই।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মো. মাসদার হোসেন বলেন, “১১৬ অনুচ্ছেদ বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠায় কোনো বাধা নয়। কারণ এটি সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদের আওতায় আসবে, যা সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণে সচিবালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়।”
এদিকে, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক মনে করেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বাস্তবায়ন করতে হলে এর সঙ্গে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের কোনো সাংঘর্ষিকতা হবে না।
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ গত ২১ সেপ্টেম্বর তাঁর অভিভাষণে বলেন, "বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে একটি পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি," এবং তিনি দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার অবসান চেয়েছেন।
খসড়ায় বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালগুলোকে তত্ত্বাবধান করবে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করবে। এই সচিবালয়ের প্রশাসনিক প্রধান হবে একজন সচিব, যিনি সিনিয়র সচিবের সমমর্যাদা ও সুবিধাদি পাবেন। তিনি অধস্তন আদালত এবং বিচারকদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, শৃঙ্খলা, ও অন্যান্য বিষয়াদি পরিচালনা করবেন।
তবে, আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে সংশোধন অথবা সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে এই অনুচ্ছেদ বাতিল করা না হলে বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে না। এই বিষয়ে হাইকোর্টে একটি রিট মামলাও চলছে, যার নিষ্পত্তি হলে অধ্যাদেশ জারি করার বাধা দূর হতে পারে।
বর্তমানে, বিচার বিভাগে চলমান দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টের অধীনে একটি স্বতন্ত্র সচিবালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালানো হচ্ছে, যা বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে এবং এর স্বাভাবিক কার্যক্রম আরও গতিশীল করবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ