
সংগৃহীত
রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থাপনার নাম বদলে গেছে। দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় ঢাকার বেশ কয়েকটি সড়ক, পার্ক, সেতু ও স্থাপনার নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। নতুন নামকরণ অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এখন থেকে ‘শহীদ আবরার ফাহাদ এভিনিউ’ নামে পরিচিত হবে।
নাম পরিবর্তনের পেছনে প্রেক্ষাপট
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মাধ্যমে টানা দেড় দশক ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর দেশে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। সেই পরিবর্তনের ধারায় এবার ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ও স্থাপনার নাম নতুনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রাসেল রহমান জানান, নাম পরিবর্তনের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়, যা বোর্ড সভার অনুমোদনের পর স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুমোদনক্রমে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
আবরার ফাহাদের নামে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ
২০১৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নির্মমভাবে হত্যা করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতের সঙ্গে অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে মতামত দেওয়ায় তাকে শিবির ট্যাগ দিয়ে রাতভর নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। আবরার হত্যাকাণ্ড দেশের মানুষকে ব্যাপকভাবে নাড়া দেয়, যার ফলে ছাত্র আন্দোলন ও ন্যায়বিচারের দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
শহীদ আবরার ফাহাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ আবরার ফাহাদ এভিনিউ’ রাখা হয়েছে।
যেসব সড়ক, ভবন ও স্থাপনার নাম বদলানো হয়েছে
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শেখ পরিবার ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন ব্যক্তিদের নামে থাকা সড়ক ও স্থাপনার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
শেখ ফজলুল হক মণি সরণি ➜ আগের নাম ‘ইনার রিং সড়ক’ পুনরুদ্ধার
শেখ জামাল সরণি ➜ আগের নাম ‘ঝাউচর প্রধান সড়ক’ পুনরুদ্ধার
অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম সরণি ➜ আগের নাম ‘কামরাঙ্গীরচর লোহারপুল-বুড়িগঙ্গা সড়ক’ পুনরুদ্ধার
শহীদ শেখ রাসেল শিশু পার্ক (কলাবাগান) ➜ আগের নাম ‘কলাবাগান শিশু পার্ক’ পুনরুদ্ধার
শহীদ শেখ রাসেল শিশু পার্ক (যাত্রাবাড়ী) ➜ আগের নাম ‘যাত্রাবাড়ী শিশু পার্ক’ পুনরুদ্ধার
মেয়র শেখ তাপস সেতু ➜ আগের নাম ‘কামরাঙ্গীরচর ব্রিজ’ পুনরুদ্ধার
মেয়র সাঈদ খোকন সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র ➜ আগের নাম ‘গেন্ডারিয়া সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র’ পুনরুদ্ধার
মেয়র সাঈদ খোকন পার্ক ➜ আগের নাম ‘সরাফতগঞ্জ পার্ক’ পুনরুদ্ধার
বীর মুক্তিযোদ্ধা কামরুল ইসলাম সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র ➜ আগের নাম ‘কামরাঙ্গীরচর সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র’ পুনরুদ্ধার
মেয়র হানিফ অডিটোরিয়াম ➜ নতুন নাম ‘নগরভবন অডিটোরিয়াম’
মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার ➜ নতুন নাম ‘গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার’
মেয়র হানিফ জামে মসজিদ ➜ নতুন নাম ‘আজিমপুর কবরস্থান জামে মসজিদ’
হানিফ মসজিদ (সায়েদাবাদ) ➜ নতুন নাম ‘সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল জামে মসজিদ’
নাম পরিবর্তনের উদ্দেশ্য কী?
ডিএসসিসি জানিয়েছে, এই নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে ঢাকার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা, নিরপেক্ষতা বজায় রাখা এবং মুক্তিযুদ্ধ ও গণআন্দোলনের প্রকৃত চেতনা তুলে ধরা হয়েছে।
নতুন নামকরণের প্রতিক্রিয়া
সাধারণ নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া মিশ্র। অনেকেই বলছেন, “রাজনৈতিক পক্ষপাত এড়াতে এটা ভালো উদ্যোগ।” তবে কিছু মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে, “নাম বদলালেও কি বাস্তবিক উন্নয়ন নিশ্চিত হবে?”
নাম পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বিতর্কও তৈরি হয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একে “গণতান্ত্রিক সংস্কারের অংশ” বললেও আওয়ামী লীগের সমর্থকরা একে “রাজনৈতিক প্রতিশোধ” বলে আখ্যা দিয়েছে।
ঢাকার নতুন চেহারা: পরিবর্তনের বার্তা
নতুন নামকরণের ফলে ঢাকার মানচিত্রে এক নতুন পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। এটি শুধু একটি নাম পরিবর্তন নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও ঐতিহাসিক পরিবর্তনেরও প্রতিফলন।
তবে এই পরিবর্তন কতটা কার্যকর হবে এবং ঢাকার মানুষের জীবনে কী প্রভাব ফেলবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ