
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চার দিনের চীন সফরটি দেশের জন্য একটি নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করেছে। এই সফরের মধ্য দিয়ে চীন ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়েছে। বিশেষত, গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন রাজনৈতিক পরিবেশে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। চীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন জানিয়ে, অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এবং তার পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
রাজনৈতিক সম্পর্ক ও ভূ-রাজনীতি
চীনের সাথে বাংলাদেশ সরকারের সম্পর্ক এখন শুধুমাত্র অর্থনৈতিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এই সফরের আলোচনায় ছিল রাজনৈতিক সম্পর্ক ও ভূ-রাজনীতির বিষয়ও। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে, তবে সেই সুফল পেতে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। রাজনৈতিক পরিবেশ যদি সুস্থ থাকে, তবে সম্পর্কের আরও গভীরতা পেতে বাধা থাকবে না।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ জানিয়েছেন, “চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ সম্পর্কের কাঠামোটি যথেষ্ট ইতিবাচক এবং ভবিষ্যতের জন্য এই কাঠামোটি কাজ করবে। চীন এই সফরের মাধ্যমে বিনিয়োগের পরিবেশের উন্নয়ন পরিদর্শন করতে চায়, এবং এতে গণতন্ত্র, কাঠামো ও নির্বাচনকে সামনে রেখে আলোচনাও হয়েছে।”
তিস্তা প্রকল্প ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের তিস্তা প্রকল্প এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে চীনের সহায়তা আশা করা যাচ্ছে। চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের মাধ্যমে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে নতুন দিগন্ত খুলে যেতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থাপনায় প্রতিবেশী দেশের সহযোগিতাও প্রয়োজন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে, মিয়ানমার ও চীনের সম্পর্ককে কাজে লাগাতে পারে বাংলাদেশ।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেছেন, “এই সফর বাংলাদেশের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। তবে, চুক্তিগুলোর সফল বাস্তবায়নের জন্য বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করতে হবে। মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ পরামর্শের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “তিস্তা প্রকল্প নিয়ে আলোচনা এগিয়ে গেলেও, পানিপ্রবাহ ভারত থেকে আসায়, প্রতিবেশী দেশের সহযোগিতা ছাড়াও সঠিক সমাধান পাওয়া কঠিন হবে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ যদি কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ায় এবং সবার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করে, তাহলে চীনসহ অন্যান্য বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে।
বাংলাদেশের ভবিষ্যত সরকার এই সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে সক্ষম হবে, যা দেশের প্রগ্রেসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ