
ছবি: সংগৃহীত
মিয়ানমারে গত শুক্রবার (২৮ মার্চ) সংঘটিত শক্তিশালী ভূমিকম্পের প্রভাব বিশাল ছিল। ৭.৭ ও ৬.৪ মাত্রার ভূমিকম্পে মিয়ানমার, থাইল্যান্ডসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর বিভিন্ন স্থাপনা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মিয়ানমারে এখন পর্যন্ত ১,৬৪৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। থাইল্যান্ডের ৩৩ তলা একটি ভবন ধসে পড়ার ঘটনায় ১০ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এই ঘটনার পর বাংলাদেশে শক্তিশালী ভূমিকম্পের ঝুঁকির ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা জারি করেছেন।
বাংলাদেশের ভূমিকম্প ঝুঁকি
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশও মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের মতো শক্তিশালী ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশের চারটি অঞ্চল—ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম—বিশেষভাবে ঝুঁকির মধ্যে আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের ভূমিকম্পের ঝুঁকি আরো বেড়েছে, বিশেষত যখন মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ডে শক্তিশালী ভূমিকম্পের ফলে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) গবেষণায় এক বছর আগে জানানো হয়েছিল, ঢাকার অন্তত ৮ লাখ ৬৪ হাজার ভবন—যা মোট ভবনের ৪০ শতাংশ—মুহূর্তেই ধসে পড়তে পারে। এসব ভবনগুলোর অবস্থা ভূমিকম্পের জন্য অতি ঝুঁকিপূর্ণ।
ভূমিকম্পের উৎস এবং বাংলাদেশের ঝুঁকি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ভূমিকম্পের দুটি প্রধান উৎস রয়েছে। একটির নাম ইন্দো-বাংলা সাবডাকশন জোন এবং অন্যটি ডাউকি চ্যুতি। তিনি বলেন, “ইন্দো-বাংলা সাবডাকশন জোন পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভূমিকম্প উৎস। এখানে দুটি টেকটোনিক প্লেট আটকে রয়েছে এবং এর মধ্যে সঞ্চিত শক্তি ৮.২ থেকে ৯ মাত্রা পর্যন্ত হতে পারে।”
এই সাবডাকশন জোনে ভারতীয় প্লেট এবং মিয়ানমারের প্লেট একে অপরকে চাপ দিয়ে আটকে রয়েছে। প্লেটের এই গতি এবং চাপের কারণে ভূমিকম্পের শক্তি যে কোনো সময় ভূপৃষ্ঠে প্রবাহিত হতে পারে। ড. আখতার আরও বলেন, “ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু আমরা যদি সঠিক প্রস্তুতি নিই, তাহলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো সম্ভব।”
প্রতিবন্ধকতা এবং প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা
ভূমিকম্পের সময় কীভাবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, তা নিয়ে ড. আখতার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ব্যক্তি, পরিবার এবং প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ভূমিকম্পের জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভূমিকম্পের পর আমাদের কীভাবে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে হবে, কী দায়িত্ব পালন করতে হবে, এসব বিষয় পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেওয়া উচিত।”
এছাড়া, ভূমিকম্পের পরবর্তী সময়ে উদ্ধারকাজের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া এবং জরুরি সহায়তা প্রদান করাও অপরিহার্য বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ভূমিকম্পের কারণে বাংলাদেশে যে কোনো বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে, তা আগেই সতর্কতা হিসেবে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করছেন। তবে, সঠিক প্রস্তুতি এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। বাংলাদেশের ভূতত্ত্ববিদদের পরামর্শ, দেশের মানুষ এবং প্রশাসনকে ভৌত প্রস্তুতি, সচেতনতা এবং সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ