
ছবি: সংগৃহীত
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রস্তুতি নিচ্ছে একটি ৬ মাসের নির্বাচনি রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনা প্রকাশের জন্য। ইতোমধ্যে রোডম্যাপের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে, যা নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে জুন-জুলাইয়ের মধ্যে ঘোষণা করবে, তবে তার আগে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পূর্বের এবং পরবর্তী কার্যক্রমের ধারাবাহিক বর্ণনা থাকবে এই কর্মপরিকল্পনায়, যা দেশের ভোটের পরিবেশকে পরিষ্কারভাবে নির্ধারণ করবে। নির্বাচন কমিশন আশা করছে, ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচন শেষ করা সম্ভব হবে। এজন্য অক্টোবরের মধ্যেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে যে, জুন-জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে। এতে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, অংশীজন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনার পরামর্শের বিষয়ও থাকবে। নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘‘আমরা ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচন করার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। তবে এর জন্য নির্বাচনের সব প্রস্তুতি অক্টোবরে তফসিল ঘোষণার আগেই শেষ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন এই লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে, যাতে তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনের সমস্ত কার্যক্রম সময়মতো সম্পন্ন করা সম্ভব হয়।’’
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের প্রস্তুতিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে, যেমন: ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন গেজেট প্রকাশ করা, নির্বাচনি আচরণ বিধিমালা তৈরি করা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক, নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ এবং নির্বাচনি সরঞ্জাম কেনাকাটা। নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির মধ্যে রয়েছে সীমানা নির্ধারণ, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা, নির্বাচন বিধিমালা সংশোধন ইত্যাদি।
নির্বাচন কমিশন বলছে, রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন সংক্রান্ত সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, কারণ তফসিল ঘোষণার ১০-২০ দিন আগেও যদি কোন দল নিবন্ধন চাইতে আসে, তা সম্ভব হবে না। তাই নিবন্ধন গেজেট প্রকাশ এবং অন্যান্য কার্যক্রম নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই শেষ করতে হবে। এক্ষেত্রে জুলাই-আগস্টের মধ্যে এসব কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর সঙ্গে, নির্বাচনি মালামাল কেনাকাটা, ভোটার তালিকা মুদ্রণ, ব্যালট পেপার ছাপানো, কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা, ব্যালট বাক্স সরবরাহ এবং ফলাফল গেজেটে প্রকাশ করার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো রোডম্যাপে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
নির্বাচন কমিশন এর আগে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্যও কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছিল। বর্তমান কমিশন ২০২৩ সালের নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে দায়িত্ব নিয়েছে এবং মে মাসে তাদের দায়িত্বের এক বছর পূর্ণ হবে। তাছাড়া, নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট প্রস্তুত এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কাজও এগিয়ে চলছে।
নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার আগে ইসি কর্মকর্তারা বিভিন্ন আইন-বিধি সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য তৈরি করার জন্য কাজ করছেন। তাদের মতে, ‘‘নির্বাচনী সংস্কারের জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও অন্যান্য আইন সংশোধন করা হবে, যাতে নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হয়।’’ এই সমস্ত প্রস্তুতি নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে হবে, যাতে দেশের জনগণ নির্ভরযোগ্য ও স্বচ্ছ নির্বাচন উপভোগ করতে পারে।
সবশেষে, নির্বাচন কমিশন বলছে, নির্বাচন আয়োজনের জন্য আইন-বিধির সংস্কারের কাজ, ভোটার তালিকা চূড়ান্তকরণ, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার মতো বিষয়গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পন্ন করা হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ