
ছবি: সংগৃহীত
থাইল্যান্ডের ব্যাংককে বিমস্টেক শীর্ষ সম্মেলনের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকটি শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠে। তবে, এই বৈঠক নিয়ে দুই দেশের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবরণ একেবারে ভিন্ন ধরনের, এবং তা নিয়ে অনেক বিতর্ক শুরু হয়েছে।
ভারতের পক্ষ থেকে বৈঠকটি নিয়ে কখনও নিশ্চিতভাবে কিছু বলা হয়নি, বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনা চললেও এর সিদ্ধান্তে এক ধরনের দ্বিধা ছিল। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগেই বলেছিল, বৈঠকের বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়, তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার বৈঠকটির জন্য তাগাদা দেওয়া হচ্ছিল। শেষে বৈঠকটি হলে, সেটিকে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে তুলে ধরা হয়, যেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীকে বাংলাদেশের ইস্যুগুলি তুলে ধরার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।
দ্বিপাক্ষিক আলোচনার বিষয়বস্তু: উত্থাপন হলেও অভিন্ন কোন ইস্যু ছিল না
বৈঠকে আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল নানা বিষয়, তবে উভয় পক্ষের বিবরণে বেশ ফারাক ছিল। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, বৈঠকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ, সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যাকাণ্ড, তিস্তা চুক্তি এবং গঙ্গা চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে ভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বৈঠকে উঠে আসে বাংলাদেশে হিন্দুদের সুরক্ষা, সীমান্তে অবৈধ পারাপার এবং শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য ভারতের সমর্থন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
ভারতের পক্ষ থেকে গুরুত্ব কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা
বাংলাদেশ সরকার বৈঠকের গুরুত্ব বাড়ানোর চেষ্টা করেছে, তবে ভারতের পক্ষ থেকে এটি কিছুটা কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অফিস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনেক সময় বৈঠকটি নিয়ে মন্তব্য করতে সময় নেওয়া হয়, যার ফলে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত, ভারতীয় সূত্র থেকে একেবারে অস্বীকার করা হয় যে, বৈঠকের সময়ে তোলা কিছু বিষয় সত্য ছিল না।
বৈঠকটির স্নায়ু যুদ্ধ: বাংলাদেশের কূটনৈতিক কৌশল ও ভারতের সঙ্কোচ
এভাবে, দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটির পর এক ধরনের চাপা স্নায়ু যুদ্ধ তৈরি হয়েছিল। বাংলাদেশের কূটনৈতিক কৌশল এবং চাপের কারণে ভারতের শেষ পর্যন্ত বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছিল, তবে সেটি ছিল যথেষ্ট সতর্কতার সাথে। বৈঠকটি বাংলাদেশের জন্য এক বড় কূটনৈতিক সফলতা হলেও, ভারতীয় প্রশাসন সেটিকে খুব বড় করে দেখাতে চায়নি।
দুই দেশের সম্পর্কের শীতলতা এবং বৈঠকের পরবর্তী ধাপ
এখন, এই বৈঠকের পরও ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের শীতলতা এবং কিছু রাজনৈতিক অস্বস্তি বজায় থাকতে পারে। তবে, তৃতীয় কোনও দেশের মাটিতে দুই নেতার বৈঠক হওয়াটা অবশ্যই একটি বড় ঘটনা, এবং এটি আগামীতে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ