
ছবি: সংগৃহীত
৫ আগস্টের ঐতিহাসিক পরিবর্তনের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এক অভূতপূর্ব ধাক্কা খায়। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের প্রেক্ষাপটে পুলিশ বাহিনী সাধারণ মানুষের রোষানলে পড়ে। জনবিস্ফোরণের শিকার হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে থানায় অগ্নিসংযোগ, পুলিশ বক্স ধ্বংস, গাড়িতে আগুন এবং পুলিশের ওপর প্রাণঘাতী হামলার নজির স্থাপিত হয়। নিহত হন অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য, ভস্মীভূত হয় শত শত যানবাহন, ধ্বংস হয় ৪৬০টি স্থাপনা।
এই বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ পুলিশ এখন নিজের অবস্থান পুনর্গঠনের প্রয়াস নিচ্ছে। জনসাধারণের আস্থা পুনরুদ্ধারে গ্রহণ করা হয়েছে একগুচ্ছ নতুন পরিকল্পনা, যার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য পুলিশ সপ্তাহে। এবারের পুলিশ সপ্তাহে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ‘কেমন পুলিশ চাই’ শিরোনামে নাগরিক মতবিনিময় সভার আয়োজনও করছে পুলিশ প্রশাসন।
পুলিশ সূত্র বলছে, এবার শুধু বাহিনীর উন্নয়ন বা সুযোগ-সুবিধা নয়, বরং বাহিনীর জনসেবার মান বাড়াতে এবং পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ফেরাতে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে কাঠামোগত সংস্কার ও মানবিক উদ্যোগকে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ঔপনিবেশিক পুলিশ আইন, যা জনগণের নিয়ন্ত্রণের ভিত্তিতে প্রণীত হয়েছিল, সেই ১৮৬১ সালের আইনের পরিবর্তনকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। পুলিশের উচ্চপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, “এই আইন পুলিশকে জনগণের নয়, বরং সরকারের কাছে দায়বদ্ধ করে রেখেছে। এটি আধুনিক গণতন্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।”
পুলিশের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি হলো—স্বাধীন ও কার্যকর পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন। এটি শুধু বাহিনীর সদস্যদের জন্য নয়, দেশের যে কোনো নাগরিকের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এতে শিক্ষকতা ও গবেষণা পরিচালনা করবেন দেশের গুণী গবেষক ও পুলিশ কর্মকর্তারা। একইসঙ্গে গঠন করা হবে ‘সেন্টার ফর পুলিশ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি)’, যা হবে পুলিশের নীতিমালা ও কার্যকর ব্যবস্থাপনার জ্ঞানভিত্তিক গবেষণাকেন্দ্র।
এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ‘এনভায়রনমেন্টাল পুলিশ ইউনিট’ গঠনের প্রস্তাবও উঠে আসছে পুলিশ সপ্তাহে। জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় এই ইউনিট বিশেষ দায়িত্ব পালন করবে। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে পুলিশ শুধু প্রতিক্রিয়াশীল বাহিনী নয়, বরং সমাজ গঠনে অংশীদার হওয়ার বার্তা দিচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ