
ছবি: সংগৃহীত
দেশজুড়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ কার্যক্রম চালিয়ে নির্বাচন কমিশন প্রায় ৫৯ লাখ নতুন নাগরিককে ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করেছে, যার মধ্যে প্রায় ৪৩ লাখ ২৭ হাজার জন আগের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। অধিকাংশের বয়স ১৮ পার হয়েছে এবং তারা ভোটার হওয়ার সব ধরনের যোগ্যতা রাখেন।
কিন্তু জটিলতা হলো—বর্তমান ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী, এই নতুন ভোটাররা আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন না, যদি সেই নির্বাচন হয় জানুয়ারির ২ তারিখের আগে। কারণ আইনে বলা আছে, ভোটার যোগ্যতা নির্ধারণ এবং তালিকা হালনাগাদ করতে হয় প্রতি বছরের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত জন্মগ্রহণকারী নাগরিকদের ভিত্তিতে। খসড়া তালিকা প্রকাশ হয় ২ জানুয়ারি এবং চূড়ান্ত তালিকা ২ মার্চ।
এ বাস্তবতায় নতুন ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন চাইছে আইন সংশোধন করতে। নির্বাচন কমিশনের গঠিত আইন সংস্কার কমিটি একটি সংশোধনী প্রস্তাবনা তৈরি করেছে, যাতে কমিশন যেকোনো সময় ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং প্রকাশ করতে পারে।
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ-এর নেতৃত্বে গঠিত কমিটি আইনটির ৩-এর দফা ‘জ’ এবং ১১(১) ধারা সংশোধনের সুপারিশ করেছে। এই সংশোধনী অনুযায়ী, ভোটার তালিকার প্রণয়ন বা সংশোধনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ১ জানুয়ারি নির্ধারিত তারিখ হিসেবে থাকবে না, বরং কমিশন চাইলে বিকল্প তারিখ নির্ধারণ করতে পারবে। একইভাবে খসড়া ও চূড়ান্ত তালিকার নির্ধারিত প্রকাশ তারিখের জায়গায় কমিশনের বিবেচনায় ‘উপযুক্ত সময়’ যুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, “বর্তমান আইন অনুযায়ী, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হলে অনেক তরুণ ভোট দিতে পারবেন না, যা গণতান্ত্রিক অন্তর্ভুক্তির জন্য বড় ধাক্কা। তাই আইন সংশোধন অত্যাবশ্যক।”
আইন মন্ত্রণালয়ও এই উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছে। অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানান, “জুলাইয়ের গণআন্দোলনে তরুণরা নেতৃত্ব দিয়েছে। সুতরাং তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব।”
চলতি বছরের ডিসেম্বরকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন দ্রুত প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদিও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচন জুন ২০২৬ পর্যন্ত হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন। এই সময়সীমা বিবেচনায় আইন সংশোধনের সুযোগ আরও বাড়ছে।
বর্তমানে নতুন ভোটার হালনাগাদ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হচ্ছেন প্রতিদিনই। অন্যদিকে মৃত ভোটারদের নাম বাতিল করার জন্য ইতোমধ্যেই ২১ লাখের বেশি তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সংশোধনী আইনের মাধ্যমে যদি ইসি নতুন ভোটারদের অন্তর্ভুক্তির ক্ষমতা পায়, তবে আগামী জাতীয় নির্বাচন আরও অধিক অংশগ্রহণমূলক এবং বিশ্বাসযোগ্য হবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ