
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিকে একটি যুগান্তকারী ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ ওয়াই রামাদান। ১২ এপ্রিলের এই কর্মসূচিকে ঘিরে দেওয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন, “এই দিনটি ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এটি ছিল এমন একটি ঘোষণা, যা সীমান্তের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বের সকল মুক্তিকামী মানুষের হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে।”
ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতের ভাষায়, “বাংলাদেশের মানুষের প্রাণশক্তি প্রমাণ করে দিয়েছে—এই জাতি কেবল ন্যায়ের জন্য লড়াই করে না, বরং সেই ন্যায়ের পক্ষে একটি অবিচল অবস্থান গ্রহণ করে। তারা শুধু প্রতিবাদ করেনি, তারা একটি মূল্যবোধগত অবস্থান নিয়েছে—যেখানে স্বাধীনতা ও মানবিকতা সর্বাগ্রে।”
বিবৃতিতে তিনি বিশেষভাবে বাংলাদেশের তরুণদের কথা উল্লেখ করেন। বলেন, “বাংলাদেশের শিক্ষার্থী, কণ্ঠশিল্পী, কবি, ইমাম, মায়েরা—সবার কণ্ঠে একই বার্তা। এই একতা কোনো রাজনৈতিক স্বার্থ নয়, এটি আত্মার একাত্মতা। একটি জনগোষ্ঠীর পক্ষে আরেকটি জনগোষ্ঠীর এমন জোরালো অবস্থান আজকের বৈশ্বিক সমাজে বিরল।”
রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমরা ঢাকা শহরের কেন্দ্রে একটি সমুদ্রের উত্থান দেখেছি—লাল-সবুজ এবং কালো-সাদার মিশেল। দুটি পতাকা, দুটি জাতি, একটি হৃদয়। রাজু ভাস্কর্যের পটভূমিতে গর্জে ওঠা এই আওয়াজ বিশ্বনেতাদের প্রতি এক কঠোর বার্তা—ন্যায়বিচার ছাড়া শান্তি আসে না।”
তিনি বাংলাদেশের প্রতি ফিলিস্তিনের চিরন্তন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “আমরা বাংলাদেশকে কেবল কূটনৈতিক বন্ধু নয়, বরং এক নির্ভরযোগ্য ভাই হিসেবেই দেখি। ফিলিস্তিনের প্রতিটি নাগরিক জানে, যখন তাদের ওপর দুঃখ নেমে আসে, বাংলাদেশ তখন তাদের পাশে দাঁড়ায় হৃদয়ের উষ্ণতায়।”
রাষ্ট্রদূত তাঁর বিবৃতিতে আরও বলেন, “আমরা জানি, আমাদের ভাইবোনেরা ঢাকা থেকে গাজার দিকে চেয়ে বলছে—‘তোমরা একা নও।’ এই অনুভূতি আমাদের মনোবল বৃদ্ধি করে, আমাদের সংগ্রামকে বেগবান করে। বাংলাদেশের জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে, এটা আমাদের জন্য আশার আলো।”
বিবৃতির একেবারে শেষ অংশে রাষ্ট্রদূত বলেন, “গাজার শরণার্থী শিবির, পশ্চিম তীরের পাহাড়, জেরুজালেমের অলিগলি—সবখানে আজ বাংলাদেশিরা আলো ছড়াচ্ছেন। ফিলিস্তিন-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী হোক। আমাদের যৌথ সংগ্রাম দীর্ঘজীবী হোক। এবং অবশ্যই, ন্যায়বিচারের জয় হোক।”
উল্লেখ্য, ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’-এর আয়োজনে গত শনিবার রাজধানী ঢাকায় ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে লাখো মানুষ অংশগ্রহণ করেন। কর্মসূচিতে ফিলিস্তিনের সমর্থনে একটি ঘোষণাপত্রও পাঠ করা হয়, যা ঐতিহাসিক সংহতির দলিল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ