
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ রেলওয়ের বর্তমান পরিস্থিতি অতিরিক্ত সংকটজনক, যেখানে যাত্রীসেবার জন্য সবচেয়ে বড় আস্থা ছিল ট্রেন, কিন্তু এখন তা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশাল সমস্যা। বর্তমানে ৭৯টি ট্রেন বন্ধ হয়ে গেছে, যার প্রধান কারণ হচ্ছে ইঞ্জিন ও কোচ সংকট। বিশেষত রেলের পুরনো ইঞ্জিনগুলোর অধিকাংশের বয়স ২০ বছরের বেশি এবং এদের ৫১ শতাংশের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে। এসব সমস্যার কারণে সাধারণ জনগণ একদিকে যেমন সেবা পাচ্ছে না, তেমনি রেলওয়ের জন্য আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। ট্রেন চলাচল বন্ধ হওয়ায় বিভিন্ন রুটের যাত্রীদের জীবনে অসুবিধা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে ঈদ বা উৎসবের সময় যখন ট্রেনের চাহিদা থাকে শীর্ষে।
এ পরিস্থিতি রেলওয়ের দুর্বল পরিকল্পনা এবং বাজেট সংকটের ফল। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন জানিয়েছেন যে, রেলের জন্য নতুন ইঞ্জিন আনা একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। দেশের মধ্যে ইঞ্জিন উৎপাদন না হওয়ায় এটি বিদেশ থেকে আনতে হয় এবং এতে অন্তত ২ থেকে ৩ বছর সময় লাগতে পারে। রেলওয়ের বর্তমান ইঞ্জিনগুলোর মধ্যে বেশিরভাগের বয়স ২০ বছর ছাড়িয়ে গেছে, আর যেগুলোর বাকি বয়স কম, সেগুলোও পুরনো হয়ে যাচ্ছে।
একইভাবে, ট্রেনের কোচগুলোরও সংকট রয়েছে। প্রায় সব রুটেই কোচের সংখ্যা কমে গিয়েছে, ফলে যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে রেল বিভাগের পরিচালনাগত গাফিলতি এবং বাজেটের অভাবের কারণে এই সংকট আরও গুরুতর হয়ে উঠেছে। তারা বলেন, একটি রেল পরিবহন ব্যবস্থার সফলতা নির্ভর করে সঠিক পরিকল্পনা ও তার যথাযথ বাস্তবায়নের উপর। কিন্তু বাংলাদেশ রেলওয়ের ক্ষেত্রে তা প্রায় সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। এজন্য দেশব্যাপী যাত্রীদের নিরাপত্তা ও আরামদায়ক সেবা দেওয়া যাচ্ছে না, যার কারণে বাংলাদেশ রেলওয়ে বর্তমানে দেশের অন্যতম অকার্যকর সেবা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
এদিকে, রেলপথের সম্প্রসারণের প্রক্রিয়া যদিও চলছে, তবে সেটি অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে এবং একে সঙ্গতিপূর্ণভাবে যথাযথ উন্নয়ন করা হচ্ছে না। এটি এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যেটি সময়মতো ইঞ্জিন, কোচ, কর্মী নিয়োগ এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করার দিকে মনোযোগ দেয়নি। ফলে দেশের একমাত্র সহজ এবং জনপ্রিয় যাতায়াত ব্যবস্থা আজ মারাত্মক সংকটে। বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, রেলওয়ের কার্যক্রম চালু রাখতে গেলে জরুরি ভিত্তিতে একটি সুসংহত মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
বর্তমানে চলমান ২৭৫টি ট্রেনের মধ্যে বেশ কিছু ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষত আন্তর্জাতিক রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার কারণে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের উপরও প্রভাব পড়েছে। মৈত্রী, বন্ধন ও মিতালি ট্রেন বন্ধ থাকায় দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের অর্থনৈতিক যোগাযোগও সংকটগ্রস্ত হতে পারে। রেলওয়ের সংস্কারের জন্য সরকারের কাছে একটি সুস্পষ্ট বাজেট বরাদ্দ এবং বিদেশী দাতা সংস্থার সাহায্য প্রয়োজন, যা রেলকে আধুনিকায়নের পথে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ