
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় নতুন মাত্রা যোগ হতে যাচ্ছে আজ বুধবার, যখন ওয়াশিংটন থেকে আসা একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল ঢাকায় পা রাখছে। তিন দিনের এ সফরে ঢাকা সফরে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর উপ-সহকারী সচিব নিকোল অ্যান চুলিক এবং পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিষয়ক ব্যুরোর উপ-সহকারী সচিব অ্যান্ড্রু আর হেরাপ।
সফরের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তুলছে এই তথ্য যে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিনিধিদলের প্রথম বাংলাদেশ সফর, যা দুই দেশের রাজনৈতিক, কৌশলগত ও মানবিক ইস্যুতে ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনায় প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
কারা থাকছেন আলোচনায়?
সফরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বাসসকে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার মার্কিন কর্মকর্তারা বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, এবং আরও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।
এছাড়া সফরকালে মার্কিন প্রতিনিধি দল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও পৃথকভাবে আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে। এ ধরনের বৈঠকে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচনপূর্ব অন্তর্বর্তী সরকার ব্যবস্থার রূপ, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সুশাসন এবং গণতান্ত্রিক চর্চা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আলোচনার মূল বিষয়বস্তু
সূত্র জানিয়েছে, নিকোল অ্যান চুলিক মূলত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাঠামো, কার্যক্রম ও গণতান্ত্রিক উত্তরণের রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা করবেন। বর্তমানে বাংলাদেশ একটি সংবেদনশীল রাজনৈতিক সময় অতিক্রম করছে, যেখানে সরকার ও বিরোধীদলের মধ্যে আস্থার সংকট এবং উত্তেজনা বিদ্যমান। এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক বার্তা হবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
অন্যদিকে, অ্যান্ড্রু হেরাপের আলোচনায় প্রাধান্য পাবে রোহিঙ্গা সংকট ও মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নাগরিকের ভবিষ্যত এবং কক্সবাজার ও ভাসানচরে তাদের জীবনমান উন্নয়ন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার অঙ্গীকার এবং মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বজায় রাখার কৌশল আলোচনায় উঠে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সংযুক্তি
বিশ্বের অন্যতম মানবিক সংকট—রোহিঙ্গা ইস্যু—তীব্রভাবে জড়িত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা ও মানবাধিকার প্রশ্নের সঙ্গে। সফরের সময় মিয়ানমারে নিযুক্ত মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স সুসান স্টিভেনসন ঢাকায় এসে অ্যান্ড্রু হেরাপের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিতে পারেন, যা সংকট মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের গভীর আগ্রহ এবং সক্রিয় ভূমিকারই ইঙ্গিত দেয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবস্থান
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সফর নিয়ে সাংবাদিকদের বলেন,"যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বহুমাত্রিক এবং ঐতিহাসিক। আমরা সব দিক নিয়ে—রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা—আলোচনা করবো।"
বাংলাদেশ সরকারের মতে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার, এবং একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী। মার্কিন এই সফর নতুন কোনো সমঝোতা বা চুক্তির রূপরেখা তৈরি না করলেও, বিদ্যমান সম্পর্ককে শক্তিশালী এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনাগুলো সুগঠিত করার লক্ষ্যে পরিচালিত হবে।
সফরের কূটনৈতিক গুরুত্ব
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সফর নিছক আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা ও ভূমিকা স্পষ্ট করার সুযোগ। ওয়াশিংটনের দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশ সরকারের কর্মকৌশলে কী প্রভাব ফেলবে—তা নির্ভর করবে এই আলোচনায় উঠে আসা বার্তা ও প্রতিক্রিয়ার ওপর।
বিশেষ করে এমন সময়ে, যখন বাংলাদেশ একদিকে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা করছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক বিরোধ ও জনআন্দোলনের বাস্তবতায় আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেকে ব্যালান্স করতে চাইছে—তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের এই সফর তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ