ছবি: সংগৃহীত
গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের ফলে আহত এক হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিককে চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে আনার এক ব্যতিক্রমধর্মী ও মানবিক উদ্যোগ নিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান আল মারকাজুল ইসলামী। এ মহৎ পরিকল্পনার আওতায়, আহত ও দুর্বল অবস্থায় থাকা ফিলিস্তিনি শিশু, নারী, বয়স্ক এবং দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে এমন ব্যক্তিদের বাংলাদেশে এনে উন্নত চিকিৎসা, পুনর্বাসন এবং পর্যাপ্ত সহায়তা প্রদান করা হবে।
উদ্যোগের প্রস্তুতি ও সরকারকে চিঠি:
আল মারকাজুল ইসলামী জানিয়েছে, এই মানবিক কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চলতি সপ্তাহেই তাদের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে তাঁকে বিষয়টি সরাসরি জানানো হবে এবং এ সংক্রান্ত একটি আবেদনপত্র জমা দেওয়া হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং ঢাকায় অবস্থিত ফিলিস্তিন দূতাবাসের সঙ্গেও আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করা হবে।
প্রতিষ্ঠানটির তথ্যপ্রযুক্তি কর্মকর্তা নাজমুল হাসান মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে জানান, “প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে অনুমতি পাওয়া গেলে আমরা আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই আহতদের বাংলাদেশে আনার উদ্যোগ নেব। গর্ভবতী নারী, আহত শিশু, শারীরিকভাবে অক্ষম বয়স্কদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। যারা চলাফেরা করতে অক্ষম, তাদের জন্য একজন অ্যাটেনডেন্ট আনার সুযোগও রাখা হবে।”
চিকিৎসা অবকাঠামো ও হাসপাতাল সমন্বয়:
আল মারকাজুল ইসলামী ইতোমধ্যে চিকিৎসা সেবার প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করেছে। প্রতিষ্ঠানটির স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা এবং শমরিতা হাসপাতালের পরিচালক ডা. এবিএম হারুনের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আহতদের মধ্যে প্রথম ধাপে ৫০০ জনকে পান্থপথে অবস্থিত শমরিতা হাসপাতালে এবং বাকিদের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত অন্যান্য হাসপাতাল, যেমন মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের আল মারকাজুল ইসলামী হাসপাতাল এবং তার বিভিন্ন শাখা হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হবে।
এছাড়া চিকিৎসার জন্য পঙ্গু হাসপাতালের (জাতীয় অর্থোপেডিকস ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান) পরিচালকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি সম্পূর্ণ ইউনিট ফিলিস্তিনি রোগীদের জন্য বরাদ্দ রাখার আশ্বাস দিয়েছে। সেখানে বিশেষায়িত চিকিৎসা, পুনর্বাসন থেরাপি এবং প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দেওয়া হবে।
চিকিৎসা ব্যয় ও সহায়তা:
আল মারকাজুল ইসলামী স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, এই উদ্যোগের সম্পূর্ণ ব্যয় তারা নিজেরাই বহন করবে। প্রতিষ্ঠানটি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সব খরচ নিজেরা বহন করতে প্রস্তুত, এমনকি অন্যান্য সহযোগী হাসপাতাল যদি তাদের কিছু খরচ দাবি করে, সেটাও বহন করবে।
নাজমুল হাসান বলেন, “আল্লাহর অশেষ রহমত এবং সরকারের সহযোগিতায় আমরা এ উদ্যোগ সফলভাবে সম্পন্ন করব ইনশাআল্লাহ। শুধু চিকিৎসা নয়, আমরা আহতদের প্রশিক্ষণ, পুনর্বাসন এবং আর্থ-সামাজিকভাবে পুনর্গঠনের ব্যবস্থাও নেব। তাদের জন্য পরবর্তী ধাপে নিজ দেশে নিরাপদে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থাও থাকবে।”
মানবিক দৃষ্টিকোণ ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্য:
এই উদ্যোগ শুধু চিকিৎসা সহায়তা নয়, বরং যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি জাতির প্রতি সহানুভূতির প্রকাশ। এটি বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনের প্রতি একটি শক্তিশালী বার্তা—যেখানে মানবতা, সহমর্মিতা এবং নৈতিক দায়িত্ববোধ একত্রিত হয়েছে।
আল মারকাজুল ইসলামী আশাবাদ ব্যক্ত করেছে যে, বিশ্বব্যাপী যে ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচারের আন্দোলন চলছে, তার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ এই উদ্যোগের মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে মানবিক সহায়তার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
ফিলিস্তিনের অসহায় মানুষদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের এ প্রচেষ্টা কেবল সাময়িক আরাম নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে তাদের জীবনে আশার আলো এনে দিতে পারে—এমন বিশ্বাসই ধারণ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



