
ছবি: সংগৃহীত
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সরকার ঘোষিত সময়সূচি, অর্থাৎ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করেই প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, কমিশনের পরিকল্পিত নির্বাচনী কর্মপরিকল্পনা আগামী জুন থেকে জুলাই মাসের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এই তথ্য জানান তিনি। এই সময় বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর অসন্তোষ প্রকাশ করার কিছুক্ষণ পরই নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এ বক্তব্য এলো, যা রাজনৈতিক মহলে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, “রিপিটেডলি ঘোষিত যে টাইমলাইন—ডিসেম্বর, সেই টাইমলাইনকে ঘিরেই আমরা অগ্রসর হচ্ছি।” তিনি যোগ করেন, “কমিশন হিসেবে শপথ নেওয়ার পর থেকেই আমরা আমাদের নিজস্ব কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছি। এটি কোনো হঠাৎ সিদ্ধান্ত নয়। আমরা রোডম্যাপ অনুযায়ী ধাপে ধাপে কাজ করছি।”
তিনি জানান, বর্তমানে ভোটার তালিকার হালনাগাদ প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। একইসঙ্গে সংসদীয় আসনের প্রশাসনিক নাম পরিবর্তনের কাজ ও আসন পুনর্বিন্যাসের প্রস্তুতিও চলছে। আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “আইন সংশোধন পেলে সীমানা পুনর্বিন্যাসের কাজ তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। আমাদের তিন মাসের প্রাক-পরিকল্পনা কাজ (প্রি-ওয়ার্ক) এর মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।”
নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন কার্যক্রমের অগ্রগতির কথাও তুলে ধরেন নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, “এই পর্যন্ত তিনটি নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। অনেক দল সময় বৃদ্ধির আবেদন করেছে। ২০ এপ্রিল আবেদনের সময়সীমা শেষ হচ্ছে। গতবার প্রায় ১০০টি দল আবেদন করেছিল, এবারেও আমরা সেসব যাচাই-বাছাই করব।”
তিনি আরও জানান, নিবন্ধিত দলগুলোকে নিয়ে ইসি সংলাপ আয়োজনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে। এ বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। তার ভাষায়, “নিবন্ধন কার্যক্রমে সাধারণত ছয় মাস সময় লাগে। সরকার ঘোষিত সময়রেখার সঙ্গে সমন্বয় রেখে আমরা এই কাজ দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করব।”
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার জানান, “আমরা আশা করছি, নির্বাচনের আগে কমিশনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত কর্মপরিকল্পনার প্রিন্টেড কপি জুন-জুলাইয়ের মধ্যেই হাতে পেয়ে যাবেন সাংবাদিকরা। এটিই হবে নির্বাচন ঘিরে আমাদের আনুষ্ঠানিক রোডম্যাপ।”
প্রসঙ্গত, একইদিন সকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিয়ে জানান, প্রধান উপদেষ্টা কোনো নির্দিষ্ট সময় বা তারিখ দেননি বরং ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত সময়সীমার কথা বলেছেন, যা নিয়ে দলটি 'একেবারেই সন্তুষ্ট নয়'। বিএনপির এই বক্তব্যের পরপরই নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ডিসেম্বরকেই মূল সময় ধরে প্রস্তুতির বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচন কমিশনের এই অবস্থান সরকার ঘোষিত নির্বাচন পরিকল্পনার সঙ্গেই সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এতে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের মধ্যে দূরত্ব আরও বাড়তে পারে। তবে কমিশনের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ প্রস্তুতির প্রতিশ্রুতি থাকায় শেষ পর্যন্ত একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের আশাও টিকে আছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এখন নজর থাকবে ২০ এপ্রিল নিবন্ধন আবেদনের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর তালিকা এবং জুন-জুলাইয়ে প্রকাশিতব্য নির্বাচনী কর্মপরিকল্পনার দিকেই। এটি নির্ধারণ করে দেবে—বাংলাদেশের রাজনীতিতে আগামি মাসগুলোতে নির্বাচনী উত্তেজনার প্রকৃতি কেমন হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ