
ছবি: সংগৃহীত
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বাণিজ্যিক প্রবৃদ্ধির নতুন দ্বার খুলে দিতে মোংলা বন্দরের ব্যাপক আধুনিকায়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মোংলা বন্দরটি হয়ে উঠবে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান, আধুনিক এবং গতিশীল সমুদ্র বন্দর। বর্তমানে মোংলা বন্দরের উন্নয়নের জন্য চীনের সঙ্গে একটি জি-টু-জি ভিত্তিক চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে এবং ২০২৮ সালের মধ্যে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
এই প্রকল্পের আওতায় মোট খরচ হবে প্রায় ৪ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৫০০.৩৯৯৭ কোটি টাকা সরকার এবং ৩৭৮২.৩৬ কোটি টাকা চীন সরকার ঋণ হিসেবে প্রদান করবে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর বন্দরের বর্তমান সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার আশ্বাস পাওয়া গেছে। বর্তমান বন্দরটি নানা কারণে পেছনে পড়ে থাকলেও এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বন্দরের কার্যক্রম বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।
মোংলা বন্দরের বর্তমান অবকাঠামোতে বড় ধরনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যেমন নদীর নাব্যতা কম, আধুনিক কন্টেইনার সুবিধা নেই, যন্ত্রপাতির অভাব ইত্যাদি। তবে চীনের সহায়তায়, প্রকল্পে দুইটি ৩৬৮ মিটার দীর্ঘ কন্টেইনার জেটি, আধুনিক কন্টেইনার টার্মিনাল, ডেলিভারি ইয়ার্ড এবং আধুনিক সরঞ্জাম স্থাপন করা হবে। এই উন্নয়নমূলক প্রকল্পটির মাধ্যমে বন্দরটির ক্ষমতা সাড়ে ৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো যাবে এবং প্রতিবছর ১.৫ কোটি টন কার্গো হ্যান্ডলিং সম্ভব হবে। এই বর্ধিত ক্ষমতা বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে নতুন মাত্রা যোগ করবে এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে।
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুধুমাত্র একটি অবকাঠামোগত প্রকল্প নয়, বরং এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত সক্ষমতার বিশাল বৃদ্ধি। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক খান মেহেদী হাসান বলেছেন, ‘এই প্রকল্পের মাধ্যমে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত খুলবে।’
এই প্রকল্পের পাশাপাশি মোংলা বন্দরের অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলোও অব্যাহত রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার ব্যয়ে ‘আপগ্রেশন অব মোংলা পোর্ট’ ও ‘ইনার বার ড্রেজিং’ এর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প।
মোংলা বন্দর এখন সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে থাকা পশুর নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত। ১৯৫০ সালে স্থাপিত এই বন্দর বর্তমানে ৫টি জেটি ও ২২টি নোঙর পয়েন্টে একসাথে ৪৭টি জাহাজকে ধারণ করতে সক্ষম। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে এবং দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
মোংলা বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন দেশের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডে বিপ্লবী পরিবর্তন আনতে পারে, যা শুধু অর্থনৈতিক সাফল্যই নয়, বরং দেশের সার্বিক কৌশলগত গুরুত্বকেও নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত করবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ