
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সুশৃঙ্খল, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। তিনি বলেন, এটি দেশের গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতায় এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে থাকবে।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (এএনএফআরইএল) এর একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা
এএনএফআরইএলের প্রতিনিধি দলে ছিলেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ব্রিজা রোসালেস, নির্বাচন ও গণতন্ত্র কর্মসূচির পরামর্শক মে বুটয়, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার থারিন্ডু আবেরত্না, প্রোগ্রাম অফিসার আয়ান রহমান খান এবং প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট আফসানা আমেই।
প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে সংস্থাটির চলমান নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম, গণতন্ত্র ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধির উদ্যোগ, এবং অংশীদারিত্বমূলক কর্মপন্থা সম্পর্কে উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। তারা জানান, নির্বাচন-সংক্রান্ত স্টেকহোল্ডারদের চিহ্নিতকরণ, প্রাসঙ্গিক চাহিদা নিরূপণ এবং একটি শক্তিশালী নাগরিক পর্যবেক্ষণ কাঠামো গঠনের লক্ষ্যে তারা কাজ করছেন।
প্রতিনিধিদল দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পরিবেশে অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা নির্ভর করছে এই নির্বাচনকে কতটা স্বচ্ছভাবে পরিচালনা করা যায় তার ওপর।
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের প্রস্তুতির বার্তা
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, “আমাদের সরকারের লক্ষ্য শুধু একটি নির্বাচন আয়োজন নয়, বরং এমন একটি নির্বাচন নিশ্চিত করা যা বাংলাদেশের মানুষ গর্বের সঙ্গে ইতিহাসে স্মরণ করতে পারবে। এজন্য আমরা নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছি, প্রশাসনকে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোরভাবে পেশাদারিত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার সুরক্ষা এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনার বিষয়টি নিশ্চিত করাই আমাদের সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার।”
প্রধান উপদেষ্টা এএনএফআরইএল প্রতিনিধিদের জানিয়ে দেন যে, সরকার নির্বাচন পর্যবেক্ষণকে স্বাগত জানায় এবং তাদের মতামত, পরামর্শ ও উপস্থিতিকে ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করছে।
গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সংহতির গুরুত্ব
ড. ইউনূস বলেন, গণতন্ত্র কেবল একটি অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া নয়, এটি একটি আন্তর্জাতিক নৈতিক অঙ্গীকারও বটে। “আমরা চাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের এই প্রচেষ্টা দেখে আশ্বস্ত হোক যে, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক অনুশীলনের ক্ষেত্রে তার দায়বদ্ধতা পালন করছে,” বলেন তিনি।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে শুধু আন্তর্জাতিক নয়, স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের সক্রিয় ও দায়িত্বশীল অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এএনএফআরইএলের প্রতিশ্রুতি
মতবিনিময় শেষে এএনএফআরইএল প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের অংশীদারদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে। তারা জানান, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক সংস্কারের লক্ষ্যে তারা আগের চেয়ে আরও সক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে যুক্ত থাকবে।
প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, “বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন দক্ষিণ এশিয়ায় একটি ইতিবাচক উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে, যদি এটি সত্যিকার অর্থে স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক হয়।”
এই সাক্ষাৎকারে আলোচনার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি অংশগ্রহণমূলক ও ন্যায়সংগত নির্বাচন আয়োজনের জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তুতি ও অঙ্গীকারের বার্তা আরও একবার স্পষ্ট হলো।
বাংলাবার্তা/এমএইচ