
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী জেলায় চীন সরকারের অর্থায়নে এক হাজার শয্যার একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর। স্বাস্থ্যখাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার পথ প্রশস্ত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) সকালে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা জানান। সভাটি অনুষ্ঠিত হয় হাসপাতালের সম্মেলনকক্ষে, যেখানে স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়।
ডা. আবু জাফর বলেন, “চীন সরকারের সরাসরি সহায়তায় এক হাজার শয্যার একটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা প্রাথমিকভাবে গ্রহণ করা হয়েছে। স্থান হিসেবে প্রস্তাবিত হয়েছে নীলফামারী জেলা। এখন প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে, এবং আমরা আশা করছি শিগগিরই এই হাসপাতালের নির্মাণকাজ শুরু হবে।”
এই উদ্যোগকে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “স্বাস্থ্যখাতের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য এটি একটি বড় মাইলফলক হবে। দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষ অত্যাধুনিক চিকিৎসা সুবিধা পাবেন নিজ এলাকাতেই, যা ঢাকা বা বড় শহরগুলোর ওপর চাপ কমাবে।”
স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি অনুরোধ
সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে আরও যত্নবান ও মানবিক হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আমাদের দেশে স্বাস্থ্যখাতে জনবল ও সরঞ্জামের ঘাটতি রয়েছে—তা সত্ত্বেও চিকিৎসক ও নার্সরা যেভাবে দিনরাত পরিশ্রম করে জনগণকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তবে আরও বেশি দায়িত্বশীলতা ও সহমর্মিতার পরিচয় দেওয়া প্রয়োজন, বিশেষ করে রোগীদের সাথে আচরণে।”
তিনি আরও বলেন, “আপনারা যদি একটি মানুষের জীবন বাঁচাতে পারেন, সেটাই সবচেয়ে বড় অর্জন। তাই সবসময় রোগীর প্রতি সহানুভূতির সঙ্গে আচরণ করুন।”
স্বাস্থ্য ক্যাডারে শূন্য পদ ও পদোন্নতির অগ্রগতি
ডা. আবু জাফর এ সময় চিকিৎসকদের ক্যারিয়ার উন্নয়নের ক্ষেত্রেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, “স্বাস্থ্য ক্যাডারে বর্তমানে ৩৭ হাজার অনুমোদিত পদ রয়েছে, কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে, প্রথম শ্রেণির (গ্রেড ওয়ান) পদ মাত্র একটি। এই অবস্থার উন্নয়নে আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি। ইতোমধ্যে সাত হাজার সুপার নিউমারারি (অতিরিক্ত) পদ তৈরি করা হয়েছে, যাতে দ্রুত নিয়োগ ও পদোন্নতি দেওয়া সম্ভব হয়।”
তিনি জানান, “তিন হাজার চিকিৎসকের ফাইল ইতোমধ্যেই অনুমোদিত হয়েছে, এবং আমরা আশা করছি খুব শিগগিরই পদোন্নতির কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।”
স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন হবে শিগগিরই
সভায় চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয় হাসপাতালের নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে। এর জবাবে ডিজি আশ্বাস দিয়ে বলেন, “স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনের বাস্তবায়ন খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই শুরু হবে। এই আইন বাস্তবায়িত হলে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব আরও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পালন করতে পারবেন।”
সভায় স্বাস্থ্যখাতের শীর্ষ কর্মকর্তারা
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ওমর রাশেদ মনিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও অধ্যাপক ডা. জিয়াউর রহমান চৌধুরী, হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী, সহকারী পরিচালক ডা. মাহবুবুল আলম, মো. বদরুল আমিনসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রধান এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
সভার শেষভাগে হাসপাতালের কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা তাদের অভিজ্ঞতা ও মতামত তুলে ধরেন এবং ডিজি তাদের প্রশ্নের উত্তর দেন। এ সময় স্বাস্থ্যখাতের সামগ্রিক উন্নয়নে অংশগ্রহণমূলক উদ্যোগ গ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।
চীন সরকারের এই হাসপাতাল প্রকল্প এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদক্ষেপ স্বাস্থ্যখাতকে আরও কার্যকর ও মানবিক করে তুলবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ ধরনের উন্নত চিকিৎসা সুবিধা বাস্তবায়ন হলে তা ভবিষ্যতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ