
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিবেচনায় দেশটিতে ভ্রমণের ক্ষেত্রে তৃতীয় ধাপের সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ধাপে কোনো দেশে ভ্রমণের আগে “পুনর্বিবেচনা” করতে নাগরিকদের আহ্বান জানানো হয়, যা মূলত ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করার একটি কূটনৈতিক বার্তা হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়া বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের (খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান) জন্য চতুর্থ ধাপের সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যার অর্থ—“ঐ এলাকায় ভ্রমণ নিষিদ্ধ।”
শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) ওয়াশিংটন থেকে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হালনাগাদ ভ্রমণ নির্দেশনায় এ তথ্য জানানো হয়। এতে বাংলাদেশে বসবাসরত মার্কিন নাগরিক এবং সম্ভাব্য ভ্রমণকারীদের সতর্কতা অবলম্বনের জন্য একাধিক কারণ তুলে ধরা হয়।
হঠাৎ সহিংসতার শঙ্কা, রাজনৈতিক অস্থিরতা
ভ্রমণ সতর্কতায় উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে দেখা যাচ্ছে। এর ফলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আকস্মিক বিক্ষোভ, প্রতিবাদ ও জনসমাগম দেখা দিচ্ছে, যা সহিংসতায় রূপ নিতে পারে। এ ধরনের বিক্ষোভে পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বলেও সতর্ক করে বলা হয়েছে।
মার্কিন নাগরিকদের উদ্দেশে বার্তায় বলা হয়েছে, “বাংলাদেশে যেকোনো ধরনের জমায়েত, মিছিল বা প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে দূরে থাকুন এবং আপনার আশপাশে কী ঘটছে সে বিষয়ে সর্বদা সজাগ থাকুন।”
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও অপরাধের ঝুঁকি
নির্দেশনায় বাংলাদেশের নগরজীবনের বাস্তবতা নিয়েও বিস্তারিত সতর্কতা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে পকেটমারি, ছিনতাই, চুরি এবং অবৈধ মাদক কারবারের ঘটনা ঘটে থাকে। এসব অপরাধ শুধুমাত্র বিদেশিদের লক্ষ্য করে সংঘটিত হয় না, তবে বিদেশিরা কখনও কখনও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারেন।
বিশেষ করে রাতের বেলায় চলাচল সীমিত রাখা, জনাকীর্ণ এলাকা এড়িয়ে চলা, এবং মোবাইল বা দামী জিনিসপত্র প্রকাশ্যে প্রদর্শন না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ সতর্কতা
সবচেয়ে কড়া সতর্কতা দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য। এই অঞ্চলে মার্কিন নাগরিকদের ভ্রমণ একেবারে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। চতুর্থ ধাপের এই সতর্কতা মূলত যুদ্ধাপরাধ, রাজনৈতিক সহিংসতা, জঙ্গিবাদ, অপহরণ এবং মারাত্মক অপরাধের ঝুঁকির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, “পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মাঝেমধ্যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, বিচ্ছিন্নতাবাদী হামলা, অপহরণ, সন্ত্রাসবাদ এবং অপরাধমূলক তৎপরতা দেখা দেয়। এই এলাকায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদেরও টার্গেট করে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে।”
মার্কিন দূতাবাস থেকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে যে, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন কর্মীদের রাজধানীর বাইরে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে পরিস্থিতির গুরুত্বের একটি ইঙ্গিতও মিলেছে।
ভ্রমণ পরিকল্পনায় পরিবর্তনের পরামর্শ
সতর্কতামূলক এই ভ্রমণ নির্দেশিকায় মার্কিন নাগরিকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এবং দূতাবাসের আপডেট ফলো করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে জানানো হয়েছে, “বর্তমান ভ্রমণ নির্দেশনা পরিস্থিতির ভিত্তিতে শিগগিরই পরিবর্তন হতে পারে এবং তা নোটিশ আকারে জানিয়ে দেওয়া হবে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সতর্কতা বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক পর্যটন ও বিদেশি বিনিয়োগে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এখনো এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, তবে সাধারণত এ ধরনের সতর্কবার্তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ইমেজ নিয়ে আলোচনার সৃষ্টি করে।
ভবিষ্যতে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটলে যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে নির্দেশনা হালনাগাদ করতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশে ভ্রমণেচ্ছু মার্কিন নাগরিকদের বাড়তি সতর্কতা এবং সচেতনতার সঙ্গে যাতায়াতের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ