
ছবি: সংগৃহীত
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল দেশের বিচার ব্যবস্থাকে আরও সহজ, দ্রুত ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেছেন, “বিচার বিভাগের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বিচারকদের তাদের দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। এ দায়িত্ব পালনের সঙ্গে কোনো প্রকার সুবিধা পাওয়ার সম্পর্ক নেই। সুবিধা না পেলেও বিচারক হিসেবে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা প্রতিটি কর্মকর্তার নৈতিক ও পেশাগত দায়িত্ব।”
রোববার (২০ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সহকারী জজ বা সমপর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম উদ্বোধনের সময় এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, যেখানে নবীন বিচারকদের দায়িত্ব, চ্যালেঞ্জ ও পেশাগত নীতিমালা নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, “আমাদের বিচার বিভাগে সীমাবদ্ধতা আছে, সেটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু এই সীমাবদ্ধতাকে অজুহাত হিসেবে না নিয়ে তার মধ্যেই কীভাবে আমরা সঠিক বিচার নিশ্চিত করতে পারি, সেটিই বিচারকদের ভাবতে হবে। বিচারক কখনো অন্যায় বা অবিচার করতে পারেন না। এটি আইন, সংবিধান এবং নৈতিকতার বিরুদ্ধেও যাবে।”
তিনি বলেন, বিচারক হিসেবে কেউ দায়িত্বে থাকলে, তিনি যেন নিজের অবস্থান, সুবিধা বা পদোন্নতির চিন্তা না করে ন্যায়বিচারকে সর্বাগ্রে রাখেন। কারণ একটি বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের বিশ্বাস নির্ভর করে বিচারকের নৈতিকতা ও পেশাগত নিষ্ঠার ওপর।
অনুষ্ঠানে তিনি বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বলেন, “এই প্রতিষ্ঠানকে এমন মানসম্পন্ন ও আধুনিক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনায় উন্নীত করতে হবে যাতে ভারত, পাকিস্তান, নেপালসহ উপমহাদেশের অন্যান্য দেশ থেকেও বিচারকরা এসে এখানে প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহী হন।”
এ প্রসঙ্গে অতীতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এই ইনস্টিটিউটে এসে অনেকেই প্রশিক্ষণের আড়ালে রাজনৈতিক বক্তব্য দিতেন। কিন্তু বিচার প্রশাসনকে কখনোই রাজনৈতিক প্রভাবের অধীন করা যাবে না। এটি একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান।”
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গ্রেফতার হওয়া ১৭ বছর বয়সি শিক্ষার্থী হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজের মামলার প্রসঙ্গে কথা বলেন ড. আসিফ নজরুল। তিনি জানান, “এই মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করার জন্য আইন মন্ত্রণালয় থেকে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান থাকা অবস্থায় মন্ত্রণালয়ের কিছু করার থাকে না।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের কাছে যেটা গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো এই মামলায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। মামলায় দুজনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রয়েছে, যেটি দীর্ঘ ৮ মাসেও প্রত্যাহার হয়নি—এটি কেন হয়নি, তা তদন্ত সংস্থা বা সংশ্লিষ্টরাই ভালো বলতে পারবেন। তবে আমরা তার ভাইকে কোনো আশ্বাস দিইনি, শুধু আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে অবহিত করেছি।”
আইন উপদেষ্টার এই বক্তব্য বিচার বিভাগের বর্তমান চ্যালেঞ্জ ও প্রয়োজনীয় সংস্কার নিয়ে নতুন করে ভাবনার জন্ম দিচ্ছে। বিশেষত তরুণ বিচারকদের উদ্দেশে তাঁর বক্তব্য, যারা ভবিষ্যতে দেশের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রধান ভূমিকা পালন করবেন, তাদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিচার ব্যবস্থাকে আরও সহজ, দ্রুত এবং প্রান্তিক জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার এই বার্তা দেশের বিচার প্রশাসনের একটি ইতিবাচক পথনির্দেশ হতে পারে বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ