
ছবি: সংগৃহীত
দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে ঋণখেলাপির অভিযোগে বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি। ব্যাংকের দাবি অনুযায়ী, এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে থাকা প্রায় ৯ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যে কোম্পানিটির চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকায় অবস্থিত একটি চিনিকলসহ প্রায় ১১ একর জমি ও এর ওপর নির্মিত কারখানা, মেশিনারিজ ও অন্যান্য অবকাঠামো নিলামে তোলা হয়েছে।
এ উপলক্ষে ব্যাংকটি রবিবার (২০ এপ্রিল) দেশের একটি স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সম্ভাব্য ক্রেতাদের কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করেছে। নিলাম কার্যক্রমটি পরিচালনা করছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের খাতুনগঞ্জ কর্পোরেট শাখা, যেখানে এস আলম গ্রুপের চিনি শিল্পের মূল কার্যালয় বিনিয়োগ হিসেবেও নিবন্ধিত ছিল।
বিশাল অঙ্কের পাওনা দাবি
ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এবং এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল্লাহ হাছান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলমের কাছ থেকে ২০২৫ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৯৪৮ কোটি ৪২ লাখ ৭০ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। এই পাওনা হিসেবের মধ্যে মূল বিনিয়োগ, সুদ, লভ্যাংশ, আদায়কালীন ক্ষতিপূরণ এবং অন্যান্য ব্যয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এই বিপুল অঙ্কের অর্থ আদায়ের জন্য ব্যাংক অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩-এর ১২ (৩) ধারা অনুযায়ী বন্ধকী সম্পত্তি বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে।
নিলামে কোন সম্পত্তি?
নিলামে তোলা জমি ও অবকাঠামোর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকায় অবস্থিত ১০ দশমিক ৯৩ একর জমি এবং সেখানকার চিনিকল, প্রসেসিং ইউনিট, মেশিনারিজ, অফিস ভবনসহ বিভিন্ন আনুষঙ্গিক স্থাপনা। এই সম্পত্তিগুলো তিনটি ভিন্ন সময়ের রেজিস্টার্ড মর্টগেজ চুক্তির আওতায় বন্ধক রাখা হয়েছিল।
প্রথমটি ২০১৩ সালের ২৮ ও ২৯ মে সম্পাদিত চুক্তি (নং ৮০৫৭),
দ্বিতীয়টি ২০১৩ সালের ১৪ ও ১৫ জুলাইয়ের চুক্তি (নং ৩৩২৭),
এবং তৃতীয়টি ২০১৪ সালের ১৩ ও ১৬ মার্চের চুক্তি (নং ৩৭৪৬)।
এসব চুক্তির আওতায় সম্পত্তিগুলো ইসলামী ব্যাংকের কাছে বন্ধক রাখা হয়েছিল, যা এখন ঋণ আদায়ে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে চলমান বিতর্ক
এস আলম গ্রুপকে ঘিরে গত কয়েক বছরে দেশের ব্যাংকিং খাতে নানা বিতর্ক ও সমালোচনার জন্ম হয়েছে। বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংক থেকে বিতর্কিতভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ উত্তোলন ও বিনিয়োগে অপব্যবহার সংক্রান্ত অভিযোগ দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে। এসব অভিযোগের সূত্র ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকও কয়েক দফা তদন্ত করেছে, তবে এখনো এই ইস্যুতে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
নতুন গভর্নর ড. আহসান মনসুর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ব্যাংক খাতকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন। বিশেষ করে রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক অনুমোদন, পরিচালনায় রাজনৈতিক প্রভাব এবং করপোরেট ঋণ ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম রোধে তিনি বেশ কিছু কড়া বার্তা দিয়েছেন।
আগামী পদক্ষেপ কী?
নিলামে সম্পত্তিগুলোর ভিত্তিমূল্য বা রিজার্ভ প্রাইস বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ করা হয়নি। আগ্রহী দরদাতাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দরপত্র জমা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। নির্ধারিত শর্তাবলীর ভিত্তিতে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে নিলামকৃত সম্পত্তি হস্তান্তর করা হবে।
অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের বড় উদ্যোগ ব্যাংক খাতে দীর্ঘদিনের ঋণখেলাপি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে একটি কার্যকর দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। তবে অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এই নিলাম কার্যক্রম আইনি জটিলতা কিংবা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে বিলম্বিত বা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
বাংলাদেশের আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এই ধরনের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ আগামীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ