
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর ও বহুমুখী করার লক্ষ্যে উভয় দেশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। আজ রবিবার (২০ এপ্রিল) ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় চীনের ইউনান প্রদেশের গভর্নর ওয়াং ইউবো বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উভয় দেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় অত্যন্ত আন্তরিক ও সহযোগিতামূলক পরিবেশে।
বৈঠকে আলোচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল—
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা ও ভবিষ্যত উন্নয়ন পরিকল্পনা। চীন ও বাংলাদেশ দুই দেশের মধ্যকার দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক, চিকিৎসা, পর্যটন ও যোগাযোগ খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারে একমত পোষণ করে। বিশেষত চীনের ইউনান প্রদেশ ও বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রামের মধ্যে আরও নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
বাণিজ্য ও বিনিয়োগের নতুন দিগন্ত
বৈঠকে উভয় পক্ষই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং পারস্পরিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়ে একমত হন। গভর্নর ওয়াং ইউবো বলেন, “ইউনান প্রদেশ বাংলাদেশকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে। দুই দেশের মধ্যে কৃষি, শিল্প এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।”
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনও চীনের এই আগ্রহকে স্বাগত জানান এবং বলেন, “বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। এখন সময় এসেছে এই সম্পর্ককে কার্যকর রূপ দেওয়ার। বিশেষত ইউনান ও চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে আমরা আঞ্চলিক বাণিজ্যে নতুন মাত্রা আনতে পারব।”
চিকিৎসা ও পর্যটনে সহযোগিতা
দুই দেশের প্রতিনিধিরা স্বাস্থ্য খাতেও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার কথা বলেন। চীনের উন্নত চিকিৎসা প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সুবিধা বাংলাদেশে স্থানান্তরের মাধ্যমে দেশীয় স্বাস্থ্যখাতের মানোন্নয়ন সম্ভব বলে উভয় পক্ষ বিশ্বাস করে।
পর্যটন খাতেও পারস্পরিক যোগাযোগ ও প্রচারণা বাড়ানোর প্রস্তাব আসে। উভয় দেশ একে অপরের পর্যটনবান্ধব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তুলে ধরার মাধ্যমে পর্যটক বাড়াতে সম্মত হন।
শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়
সাক্ষাতে শিক্ষার্থী বিনিময়, গবেষণা সহযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে দু’দেশের জনগণের মধ্যে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার প্রস্তাব আসে। বিশেষত ইউনান প্রদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গবেষণা কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যৌথ কার্যক্রম শুরু করার আলোচনা হয়।
কূটনৈতিক স্তরে সম্পর্ক জোরদারের অঙ্গীকার
এই বৈঠকটি দুই দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কারণ বাংলাদেশ বর্তমানে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI)-এর অংশীদার হওয়ায় চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ জোরদার করার সুযোগ বাড়ছে।
বৈঠকের শেষে উভয়পক্ষই ভবিষ্যতে উচ্চ পর্যায়ের সফর, যৌথ কর্মশালা ও মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আশা করছেন, এই বৈঠকের ফলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে আরও সুগভীর, টেকসই ও কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে উঠবে—বিশেষ করে বাণিজ্যিক এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার খাতগুলোতে।
এটি দ্বিপাক্ষিক উন্নয়নের একটি নতুন মাইলফলক হয়ে থাকবে বলেও মত দিয়েছেন পররাষ্ট্র বিশ্লেষকেরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ