
ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেওয়া একটি বিতর্কিত দাবি—নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নাকি ইসরায়েলকে এক হাজার কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছেন—এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে নিশ্চিত করেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ
এ গুজবের সূত্রপাত একজন ধর্মীয় বক্তা, মুফতি আলাউদ্দিন জিহাদীর একটি বক্তব্য থেকে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই বক্তব্যে তিনি দাবি করেন, ড. ইউনূস ইসরায়েলকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সহায়তা দিয়েছেন, যা ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যার পটভূমিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করে। তবে বিষয়টি সঠিক নয় বলেই জানিয়েছেন প্রেস উইংয়ের ‘ফ্যাক্ট’ বিভাগ।
প্রেস উইং থেকে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, এমন বক্তব্য কোনোভাবেই সত্য নয় এবং এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছড়ানো হয়েছে। ফ্যাক্ট বিভাগ আরও জানায়, এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার পাশাপাশি সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা
প্রেস উইং দাবি করেছে, এই অপপ্রচারের পেছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে। তাদের মতে, আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এমন ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে।
প্রেস উইংয়ের মতে, এ ধরনের অপতৎপরতা চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনা ও সহিংসতা ছড়ানোর হুমকি সৃষ্টি করছে। তারা দেশবাসীকে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর ও প্ররোচনামূলক বক্তব্যে কান না দিতে আহ্বান জানিয়েছে।
ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে বাস্তবতা উন্মোচিত
স্বতন্ত্র ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা Rumor Scanner এই দাবি নিয়ে একটি অনুসন্ধান চালিয়েছে। তারা জানায়, মূল গুজবটি ছড়ানোর সূত্রপাত হয়েছিল ২০২৩ সালের ১৩ অক্টোবর। সেই সময় ‘বাংলা ইনসাইডার’ নামক একটি অনলাইন পোর্টাল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে দাবি করা হয়, ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠান 'গ্রামীণ আমেরিকা' ইসরায়েলকে এক কোটি মার্কিন ডলার অর্থ সহায়তা দিয়েছে।
তবে রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়—প্রতিবেদনে যেই ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির কথা বলা হয়েছে, আসলে তেমন কোনো বিবৃতি কোথাও প্রকাশ হয়নি। বিষয়টি যাচাই করে তারা নিশ্চিত করে যে, ইসরায়েলি সরকার, সাংবাদিক, এমনকি দেশটির ফ্যাক্টচেকাররাও এই ধরনের অর্থ সহায়তার কোনো তথ্য জানেন না।
ইউনূস সেন্টারের পক্ষ থেকেও ব্যাখ্যা
ড. ইউনূসের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ‘ইউনূস সেন্টার’ থেকেও বিষয়টি সোজাসাপ্টা অস্বীকার করা হয়েছে। তারা জানায়, ইউনূস বা তার নেতৃত্বাধীন কোনো প্রতিষ্ঠান কখনোই ইসরায়েলকে অর্থ সহায়তা দেয়নি। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন গুজব।
সরকারের সতর্ক বার্তা ও আহ্বান
এই প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার স্পষ্টভাবে জানায়—জাতিকে বিভ্রান্ত করার জন্য এ ধরনের ভুয়া তথ্য ছড়ানো হচ্ছে এবং এটি দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। সরকার জনগণ, বিশেষ করে দেশের আলেম-ওলামা এবং সচেতন নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে—তারা যেন এমন অপপ্রচার থেকে দূরে থাকেন এবং দায়িত্বশীল অবস্থান গ্রহণ করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ ধরনের অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণেরও ঘোষণা দিয়েছে।
একজন আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত ব্যক্তিত্বকে জড়িয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা দেশের জন্য ক্ষতিকর বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, বিভ্রান্তিকর তথ্য ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে সচেতনতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।
অতএব, যাচাই না করে কোনো তথ্য বিশ্বাস বা প্রচার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে সবাইকে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ