
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক ভ্রমণ সতর্কতাকে ঘিরে ভারতীয় কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদনকে ‘বিভ্রান্তিকর ও তথ্যগতভাবে ভুল’ বলে আখ্যা দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। বিষয়টি নিয়ে রোববার (২০ এপ্রিল) প্রেস উইংয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ ‘C A Press Wing Facts’-এ এক স্পষ্ট ব্যাখ্যামূলক বিবৃতি প্রকাশ করে সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের কিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলকে ভ্রমণের জন্য ‘স্তর ৪’— অর্থাৎ ‘ভ্রমণ করবেন না’— এমন সতর্কতামূলক তালিকাভুক্ত করেছে, এবং এটি নতুন কোনো আপডেট বা উন্নয়ন হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রেস উইং বলেছে, এই তথ্য ‘সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর এবং বাস্তবতা বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছে।’
প্রেস উইংয়ের ভাষ্যমতে, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভ্রমণ নির্দেশিকা বা সতর্কতা কোনো নতুন সিদ্ধান্ত নয়, বরং এটি নিয়মিত সময়কালীন পর্যালোচনার অংশ হিসেবে পূর্বের সতর্কতা পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে মাত্র। তারা সাফ জানায়, এই সতর্কতাপত্রে বড় কোনো নীতিগত বা স্তরভিত্তিক পরিবর্তন আনা হয়নি। বরং সেখানে পূর্বের মতোই কিছু টেকনিক্যাল এবং ভাষাগত ছোটখাটো সম্পাদনা করা হয়েছে।
প্রেস উইংয়ের বিবৃতি অনুযায়ী, বর্তমানে মার্কিন ভ্রমণ সতর্কতায় বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলকে ‘স্তর ৪’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে, যার অর্থ হচ্ছে— “Do Not Travel” অর্থাৎ ‘ভ্রমণ করবেন না’। তবে এই অবস্থান নতুন নয়; এটি দীর্ঘদিন ধরেই এই পর্যায়ে ছিল এবং এখনো একই অবস্থানে রয়েছে।
বাংলাদেশের বাকি অঞ্চলসমূহকে ‘স্তর ৩’ বা “Reconsider Travel”— অর্থাৎ ‘ভ্রমণ পুনর্বিবেচনা করুন’ পর্যায়ে রাখা হয়েছে। এই নির্দেশনাও আগের মতোই অপরিবর্তিত রয়েছে। ফলে ভারতীয় কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ‘নতুন করে সতর্কতা জারি’, কিংবা ‘নতুন করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যা’— এ ধরনের বক্তব্যকে প্রেস উইং তথ্যগতভাবে ভুল এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছে।
প্রেস উইং বলেছে, “নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি কিংবা নতুন কোনো সহিংস ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই সতর্কতা জারি করা হয়েছে”— এমন ইঙ্গিতও একেবারেই ভিত্তিহীন। বরং এসব ভুল তথ্য জনমনে অযথা উদ্বেগ তৈরি করছে এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও পর্যটনখাতের প্রতি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “এই ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন সাংবাদিকতার ন্যূনতম পেশাদার মান ও নীতিমালার লঙ্ঘন। এর পেছনে থাকা উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। সুনির্দিষ্ট তথ্য যাচাই ছাড়া এভাবে প্রতিবেদন প্রচার জনস্বার্থবিরোধী ও নীতিগতভাবে দুর্বল।”
সিএ প্রেস উইং এই প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকতা পেশার দায়িত্বশীলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা রক্ষা করার আহ্বান জানিয়ে বলে, “বর্তমান বিশ্বে তথ্য যত দ্রুত ছড়ায়, তত বেশি প্রয়োজন তথ্যের যথার্থতা নিশ্চিত করা। গণমাধ্যমের উচিত হবে যাচাই ছাড়া বিভ্রান্তিকর শিরোনাম বা উপস্থাপন এড়িয়ে চলা।”
এছাড়া বিবৃতিতে জনসাধারণ ও গণমাধ্যমকে অনুরোধ জানানো হয়েছে যেন কেউ বিভ্রান্ত না হন এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে ভ্রমণ সংক্রান্ত সঠিক তথ্য গ্রহণ করেন। তারা একটি সরাসরি লিংকও শেয়ার করেছে, যেখানে মার্কিন ভ্রমণ সতর্কতার বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যাবে:
সারসংক্ষেপে, সিএ প্রেস উইং-এর পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে— বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রকাশিত ভ্রমণ সতর্কতা ‘পুরনো’ এবং ‘অপরিবর্তিত’। সুতরাং ভারতীয় মিডিয়ায় প্রচারিত খবরের কারণে বিভ্রান্ত না হয়ে দায়িত্বশীল ও নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে তথ্য যাচাই করাই হবে শ্রেয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ