
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে আলোচিত মডেল ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে তার সব ধরনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য তলব করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। আজ সোমবার (২১ এপ্রিল) দেশের সব তফসিলি ব্যাংকে পাঠানো এক চিঠির মাধ্যমে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বিএফআইইউ-এর পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, মেঘনা আলমের নামে বা তার মালিকানাধীন যেকোনো একাউন্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব তথ্য ও দলিল—যেমন হিসাব খোলার আবেদনপত্র, কেওয়াইসি (Know Your Customer) ফরম, হিসাব পরিচালনার ধরন, অর্থ লেনদেনের বিবরণ, এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য নথি—চিঠি প্রাপ্তির তারিখ থেকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে বিএফআইইউ-এর দপ্তরে পাঠাতে হবে।
এ ধরনের তলব সাধারণত তখনই করা হয় যখন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আর্থিক কার্যক্রম নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয় কিংবা তার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অপরাধ সংশ্লিষ্ট কোনো মামলা বা অভিযোগ গৃহীত হয়।
এর আগে, গত ৯ এপ্রিল রাতে রাজধানীর অভিজাত একটি এলাকায় অবস্থিত নিজ বাসা থেকে মেঘনা আলমকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আটকের পর তাকে গোয়েন্দা হেফাজতে নেওয়া হয় এবং তার বিরুদ্ধে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়।
পরবর্তীতে ১৫ এপ্রিল ধানমন্ডি মডেল থানায় মেঘনার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আবদুল আলীম। মামলায় অভিযোগ করা হয়, মেঘনা আলম চাঁদাবাজি ও প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। একই মামলায় তার সঙ্গে আরও একজন ব্যবসায়ী—দেওয়ান সমিরের নাম উল্লেখ করা হয় এবং অজ্ঞাতনামা আরও দুই থেকে তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, অভিযুক্তরা একটি ব্যবসা-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে অর্থ আদায়ে জোরপূর্বক চাপ প্রয়োগ করছিলেন বলে অভিযোগকারীর দাবি। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মেঘনা ও তার সহযোগীরা বিভিন্ন সময়ে হুমকি প্রদান এবং প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করেছেন।
মডেলিং ও মিডিয়াতে কাজ করলেও সাম্প্রতিক সময়ে মেঘনা আলমের নাম বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হয়ে উঠেছে বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে, তার ব্যাংক হিসাব সংক্রান্ত তদন্ত শুরু হলে এ মামলার আর্থিক দিকগুলো বিশদভাবে যাচাই করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ব্যাংক হিসাব বিশ্লেষণের মাধ্যমে তার আয়-ব্যয়ের প্রকৃতি, সম্ভাব্য অর্থ পাচার, অপ্রকাশিত সম্পদের তথ্য, অথবা অন্য কোনো অপরাধমূলক আর্থিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে।
বর্তমানে ডিবি পুলিশ ও বিএফআইইউ সমন্বয়ে মেঘনার বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে। মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে গোয়েন্দা সংস্থা ও অর্থনৈতিক গোয়েন্দা ইউনিট। তদন্তে নতুন কোনো তথ্য পাওয়া গেলে ভবিষ্যতে তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ যুক্ত হতে পারে বলেও ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
মেঘনা আলমের পক্ষে এখনো পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে তার আইনজীবীর মাধ্যমে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
তদন্তের অগ্রগতি এবং ব্যাংক তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে আগামীতে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট কিংবা নতুন মামলা গঠন হতে পারে বলে ধারণা করছে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ