ছবি: সংগৃহীত
আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই নগর উন্নয়নের মতো সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একযোগে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জাতিসংঘ অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইএসসিএপি) ৮১তম বার্ষিক অধিবেশনে ভিডিও বার্তায় তিনি এ আহ্বান জানান।
আজ সোমবার থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অবস্থিত জাতিসংঘ সম্মেলন কেন্দ্রে এই উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনটি শুরু হয়। এবারের অধিবেশনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে—“এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্থিতিশীল এবং টেকসই নগর উন্নয়নের জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা।” এতে জাতিসংঘের ৫৩টি সদস্য রাষ্ট্র এবং ৯টি সহযোগী সদস্য দেশ অংশগ্রহণ করছে।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। প্রতিনিধি দলের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি উন্নয়ন পরিকল্পনায় যুক্ত বিশিষ্টজনরাও রয়েছেন।
অধিবেশনের উদ্বোধনী দিনে দেওয়া ভিডিও ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন ও নগরায়ণের চ্যালেঞ্জগুলো আজ আর কোনো একটি দেশের একক সমস্যা নয়, বরং তা আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিকভাবে সমাধানের দাবি রাখে। আমাদের উচিত, একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়া এবং পারস্পরিক সহায়তার ভিত্তিতে টেকসই সমাধান খুঁজে বের করা।”
তিনি তার বক্তব্যে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জলবায়ু-সহনশীল নগর উন্নয়নের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন এবং তরুণদের উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যৎ গঠনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। ইউনূস বলেন, “নগর উন্নয়ন কেবল অবকাঠামোগত নয়, এটি সামাজিক ন্যায়বিচার, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং অর্থনৈতিক সমতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রও বটে।”
তিনি তার বিখ্যাত ‘থ্রি জিরো ভিশন’-এর উল্লেখ করেন—অর্থসম্পদের কেন্দ্রীকরণের অবসান, বেকারত্বের অবসান, এবং নিট কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি। এ ভিশনের আলোকে ইউনূস বলেন, “আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই তিনটি লক্ষ্য অর্জনের উপর। একে বাস্তবে রূপ দিতে হলে দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞান, প্রযুক্তি এবং আর্থিক সহায়তা বিনিময় বাড়াতে হবে।”
এ প্রসঙ্গে তিনি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রযুক্তি হস্তান্তর, জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জাতীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে জানান, “অধ্যাপক ইউনূস তার বার্তায় বাংলাদেশের সংস্কার অভিযাত্রা এবং ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।”
ব্যাংককে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনটিকে বাংলাদেশ কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দেখছে। যেখানে দেশের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার, আঞ্চলিক অংশীদারিত্ব জোরদার করার এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও নগর সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের সমাধানগুলো তুলে ধরার সুযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য, ইএসসিএপি জাতিসংঘের একটি আঞ্চলিক সংস্থা হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, পরিবেশ সংরক্ষণ, টেকসই উন্নয়ন এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কাজ করে আসছে।
সপ্তাহব্যাপী চলবে এই সম্মেলন। এতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা জলবায়ু অর্থায়ন, নগর অবকাঠামো, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি এবং যুবকদের ক্ষমতায়নের বিষয়গুলোতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এই অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ তার উন্নয়ন অভিযাত্রা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও জোরালোভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



