
ছবি: সংগৃহীত
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ শেখ পরিবারের অন্তত ১০ সদস্যের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) লক করেছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনস্থ জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ। এ সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
গোপন চিঠি ও মৌখিক নির্দেশ
নথিপত্র ঘেঁটে জানা যায়, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীরের মৌখিক নির্দেশে শেখ পরিবারের এই সদস্যদের এনআইডি লক করা হয়। তবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিষয়ে কোনো লিখিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সূত্রগুলো জানায়, একটি অভ্যন্তরীণ চিঠির মাধ্যমে তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের এনআইডি লক করা হয়। ফলে তারা এখন জাতীয় পরিচয়ের সেবা বা এনআইডি-নির্ভর কোনো নাগরিক সুবিধা, যেমন ব্যাংক হিসাব খোলা, পাসপোর্ট নবায়ন, প্রবাসী নিবন্ধন, রিটার্ন দাখিল বা মোবাইল রেজিস্ট্রেশন—কোনোটিই করতে পারছেন না।
যাদের এনআইডি লক করা হয়েছে
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসি কর্মকর্তার বরাতে জানা গেছে, যাদের এনআইডি লক করা হয়েছে, তারা হলেন—
১. শেখ হাসিনা
২. সজীব ওয়াজেদ জয়
৩. সায়মা ওয়াজেদ হোসেন
৪. শেখ রেহানা
৫. টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক
৬. আজমিনা সিদ্দিক
৭. শাহিন সিদ্দিক
৮. বুশরা সিদ্দিক
৯. রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক
১০. তারিক আহমেদ সিদ্দিক
এই ১০ জনের মধ্যে কয়েকজন বর্তমানে বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন বা পড়াশোনা-চিকিৎসারত অবস্থায় আছেন বলে জানা গেছে।
রাজনৈতিক পটভূমি: ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও ক্ষমতা হারানো
২০২৪ সালের শেষ প্রান্তে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের মুখে পড়ে। বিভিন্ন শহরে চলমান দুর্নীতিবিরোধী এবং রাজনৈতিক সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে শেখ হাসিনার সরকার ব্যাপক জনরোষের মুখে পড়ে।
২০০৪ সালের ৫ আগস্ট, ব্যাপক বিক্ষোভ ও সরকারবিরোধী চাপের মুখে শেখ হাসিনা চিকিৎসা ও নিরাপত্তার অজুহাতে ভারত অভিমুখে পালিয়ে যান। সেই থেকেই তিনি ভারতে অবস্থান করছেন।
বর্তমান সরকারের কর্মকর্তাদের বরাতে জানা গেছে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
জাতীয় পরিচয় লকের রাজনৈতিক তাৎপর্য
বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার এনআইডি লক একটি কৌশলগত পদক্ষেপ, যা তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার আইনি ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারে। কারণ, এনআইডি লক করলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সেবা ও নাগরিক সুবিধা বন্ধ হয়ে যায়, যা প্রবাসজীবনেও জটিলতা তৈরি করতে পারে।
তবে বিরোধী মহল এটিকে "রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ" বলে আখ্যা দিয়েছে। তাদের মতে, এটি ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং নাগরিক অধিকারের চরম লঙ্ঘন।
নতুন প্রশ্ন ও ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি
এনআইডি লক সিদ্ধান্তটি নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব উদ্যোগে নেওয়া, নাকি সরকারের নির্দেশে, সে প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। এনিয়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি নির্বাচন কমিশন এই সিদ্ধান্তে সরকারের ইন্ধন পায়, তবে তা কমিশনের নিরপেক্ষতা ও সাংবিধানিক দায়বদ্ধতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
এদিকে শেখ পরিবারে ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, ভারতের রাজনৈতিক মহলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে এবং শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ আশ্রয়-নির্ভরতাও এই পরিস্থিতিতে জটিল হয়ে উঠতে পারে।
এই ঘটনায় আগামী দিনে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় নতুন মাত্রা যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।,
বাংলাবার্তা/এমএইচ