
ছবি: সংগৃহীত
কাতারের রাজধানী দোহায় শুরু হতে যাচ্ছে ২০২৫ সালের আর্থনা শীর্ষ সম্মেলন, যেখানে অংশ নিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে দোহায় পৌঁছেছেন। এই সম্মেলনটি বৈশ্বিক কৌশল, টেকসই উন্নয়ন এবং উদ্ভাবনী চিন্তার মিলনমেলা হিসেবে বিবেচিত হয়, এবং এবার বাংলাদেশ থেকে সরকারি, কূটনৈতিক ও ক্রীড়াক্ষেত্রের বিশিষ্ট প্রতিনিধিত্ব নজর কাড়ছে আন্তর্জাতিক মহলে।
সোমবার (২১ এপ্রিল) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাত্রা করে বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটটি স্থানীয় সময় রাত ৯টা ৪০ মিনিটে দোহা হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরে প্রধান উপদেষ্টাকে অভ্যর্থনা জানান কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলাম এবং দূতাবাসের অন্যান্য কর্মকর্তা।
দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক কর্মসূচিতেই ব্যস্ত সময় কাটবে
আগামী ২২ ও ২৩ এপ্রিল দোহায় অনুষ্ঠিতব্য দুই দিনের সম্মেলনে অংশ নিতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস একাধিক আন্তর্জাতিক অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন বলে জানা গেছে। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য— “আমাদের উত্তরাধিকার গড়ে তোলা : স্থায়িত্ব, উদ্ভাবন ও ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান”—যেখানে টেকসই উন্নয়ন, স্থানীয় জ্ঞান ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তির সংমিশ্রণ নিয়ে গভীরতর আলোচনা হবে। সম্মেলনের অংশ হিসেবে থাকছে উপস্থাপনা, ইন্টার-অ্যাকটিভ প্যানেল সেশন, থিম-ভিত্তিক কর্মশালা ও গোলটেবিল আলোচনাগুলো, যেখানে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।
সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে, প্রধান উপদেষ্টার কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কথা রয়েছে। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ, জ্বালানি সহযোগিতা, জনশক্তি রপ্তানি ও ক্রীড়াক্ষেত্রে অংশীদারত্ব বৃদ্ধিসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনায় আসতে পারে।
উচ্চপর্যায়ের সফরসঙ্গী ও নারীক্রীড়াবিদদের অংশগ্রহণে নজির
চার দিনের এই রাষ্ট্রীয় সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, যাঁরা পৃথক বৈঠক ও ফোরামে অংশ নেবেন। তবে এবার এই সফরের বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে জাতীয় পর্যায়ের চারজন নারী ক্রীড়াবিদের অন্তর্ভুক্তি। বাংলাদেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে নারীদের অগ্রযাত্রার প্রতীক হিসেবে দোহা সফরে অংশ নিয়েছেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড় আফিদা খন্দকার ও শাহেদা আখতার রিপা এবং জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সদস্য সুমাইয়া আখতার ও শারমিন সুলতানা।
তাঁদের এই সফর শুধু আনুষ্ঠানিক প্রতিনিধিত্ব নয়, বরং নারী ক্ষমতায়ন ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়া-সফর জগতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা তুলে ধরবে বলে মনে করছেন ক্রীড়া সংশ্লিষ্টরা। সূত্র জানায়, এ ক্রীড়াবিদরা দোহায় আয়োজিত ক্রীড়াভিত্তিক একটি সেশন ও বিশেষ যুব সংলাপে অংশ নেবেন।
আর্থনা সামিটে বাংলাদেশের সক্রিয় ভূমিকা প্রত্যাশিত
এই শীর্ষ সম্মেলন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, টেকসই উন্নয়ন এবং সামাজিক দায়বদ্ধতায় ভিত্তিক অর্থনীতির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। অধ্যাপক ইউনূস নিজেই ‘সোশ্যাল বিজনেস’ ধারণার প্রবর্তক হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিসরে সুপরিচিত। তাই, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাঁর অংশগ্রহণ এই সম্মেলনের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সফরের মাধ্যমে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের কৌশলগত সম্পর্ক আরও সুসংহত হবে। শ্রমবাজার, প্রযুক্তি বিনিয়োগ, জ্বালানি সহযোগিতা ও শিক্ষাক্ষেত্রে সম্ভাব্য নতুন চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
বিশ্বজুড়ে টেকসই অর্থনীতি ও সমাজিক দায়বদ্ধ ব্যবসায়িক মডেলের আলোচনায় বাংলাদেশ যে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাইছে, তারই প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে এই সফরে। দোহা সম্মেলনে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশের ভাবমূর্তি এবং নীতি-অবস্থানের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একইসঙ্গে এই সফর জাতীয় নারী ক্রীড়াবিদদের আন্তর্জাতিক পরিচিতি ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির এক নতুন অধ্যায় রচনা করবে বলেই আশা করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ