
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে কাতারের বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (Special Economic Zone – SEZ) গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কাতারের দোহায় বুধবার অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এই প্রস্তাব দেন তিনি। দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ সাউদ বিন আবদুল রহমান বিন হাসান আল-থানির সঙ্গে আলোচনার সময় ইউনূস বলেন, বাংলাদেশে সমরাস্ত্র যন্ত্রাংশসহ বিভিন্ন শিল্পখাতে কাতারি বিনিয়োগকারীরা লাভজনকভাবে বিনিয়োগ করতে পারেন, এবং তাদের জন্য একটি নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দ দেওয়া হলে তা দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে।
এই বৈঠকে ইউনূস কাতারের সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা নিজ দেশের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে শিল্প স্থাপন ও উৎপাদিত পণ্য রপ্তানির সুযোগ গ্রহণে উৎসাহিত করে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন দ্রুত শিল্পায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, এবং সরকার দেশটিকে একটি আঞ্চলিক উৎপাদন ও অর্থনৈতিক হাবে রূপান্তরের জন্য কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বিনিয়োগ-বান্ধব সেবা চালুর উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, কাতার যদি বাংলাদেশের এসব উন্নয়ন কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়, তবে তা পারস্পরিক লাভজনক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসসকে জানান, এ বৈঠকে কাতার-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও গভীর ও কার্যকর করার বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রেস সচিবের ভাষায়, “প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশের নানা ইতিবাচক দিক তুলে ধরেন এবং জানান, বাংলাদেশ সরকার শিল্প খাতে বিদেশি বিনিয়োগকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে।”
অধ্যাপক ইউনূস বৈঠকে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ কাতারের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি ও বহুমুখী সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী। তিনি কাতারের সেনাবাহিনীতে বাংলাদেশি সেনাসদস্য নিয়োগের বিষয়টি উল্লেখ করে জানান, বর্তমানে তিন বছর পরপর ৭২৫ জন সেনাসদস্য কাতার নেয়, তবে এই সংখ্যাটি আরও বাড়ানো সম্ভব এবং দরকারি।
এদিকে আজ একই দিনে কাতারের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রী শেখ ফয়সাল বিন আল থানির সঙ্গেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন অধ্যাপক ইউনূস। এই বৈঠকে তিনি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ, প্রযুক্তি স্থানান্তর, গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা এবং বৃহৎ শিল্প প্রকল্পে যৌথ বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন এমন একটি সময় চলছে, যেখানে কৌশলগত অংশীদারিত্বের মাধ্যমে দেশীয় উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। তিনি কাতারকে আহ্বান জানান এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শিল্প ও প্রযুক্তিখাতে বড় বিনিয়োগ করতে।
বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব এবং যৌথ বাণিজ্যিক সহযোগিতার আহ্বান কাতার-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে উভয়পক্ষ আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। অধ্যাপক ইউনূসের এই সফর এবং প্রস্তাবনাগুলো দুই দেশের বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা ও শ্রম খাতে নতুন দ্বার উন্মোচনের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ