
ছবি: সংগৃহীত
চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরের শেষ দিন কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল থানির সঙ্গে সৌজন্য ও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) দোহার স্থানীয় সময় দুপুরে কাতারের রাজধানী দোহায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক আরও জোরদার করা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, শিক্ষাবিনিময়, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়।
ড. ইউনূসের অফিসিয়াল ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, বৈঠকটি ছিল অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং ভবিষ্যতের সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সম্ভাবনা জাগিয়েছে।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন। কাতার সরকারের পক্ষ থেকেও উচ্চ পর্যায়ের একাধিক প্রতিনিধি আলোচনায় অংশ নেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস কাতারে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যাণ এবং দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির প্রসারে অধিক সহযোগিতার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের যুব সমাজের কর্মদক্ষতা ও উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগাতে পারলে কাতারের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।”
কাতারের প্রধানমন্ত্রীও বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে বলেন, “বাংলাদেশ আমাদের দীর্ঘদিনের অংশীদার। আমরা এই সম্পর্ককে আরও দৃঢ় ও ফলপ্রসূ করতে আগ্রহী। নবায়নযোগ্য জ্বালানি, কৃষি প্রযুক্তি, এবং শিক্ষা খাতে বাংলাদেশ-কাতার অংশীদারিত্বের অনেক সুযোগ রয়েছে।”
‘আর্থনা শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫’-এ যোগ দিতে সোমবার (২১ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকা ত্যাগ করেন ড. ইউনূস ও তার সফরসঙ্গীরা। বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে তাঁরা দোহার উদ্দেশে যাত্রা করেন এবং কাতারের স্থানীয় সময় রাত ৯টা ৪০ মিনিটে দোহা হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। কাতার সরকারের পক্ষ থেকে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা তাঁদের অভ্যর্থনা জানান।
চার দিনের এই সফরকালে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। কাতারের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে এমন আলোচনাগুলোকে বাংলাদেশ-কাতার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন মাত্রা যুক্ত করবে বলে কূটনৈতিক মহল মনে করছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক আনোয়ারুল কবির বলেন, “ড. ইউনূসের এই সফর কেবল কূটনৈতিক সৌজন্য নয়, বরং দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্বের ভিত্তি গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে বাংলাদেশের জন্য নতুন কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ সম্ভাবনার দরজা খুলে দিতে পারে এই সফর।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রুবিনা পারভীন বলেন, “আন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক পরিসরে এমন সফর কেবল রাজনীতি নয়, বরং কূটনীতির দৃঢ়তা ও দেশের ভাবমূর্তি পুনর্গঠনে সহায়ক।”
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই সফর কেবল দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সৌহার্দ্য নয়—এটি একটি ভবিষ্যতকেন্দ্রিক পদক্ষেপ, যেখানে উন্নয়ন, শান্তি ও টেকসই অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের মূলনীতি সামনে রেখে বাংলাদেশ-কাতার সম্পর্ককে আরও নতুন মাত্রায় উন্নীত করার বার্তা বহন করছে। কাতার সফরের এই ইতিবাচক রেশ আগামী দিনে দুই দেশের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও সুসংহত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ