
ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে প্রবাহিত তাপপ্রবাহটি এখন মৃদু থেকে মাঝারি রূপ ধারণ করেছে এবং দেশের আরও কয়েকটি অঞ্চলে তা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) প্রকাশিত পূর্বাভাসে অধিদফতরের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা জানিয়েছেন, আগামী কয়েকদিন তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকলেও দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, যা কিছুটা স্বস্তি এনে দিতে পারে জনজীবনে।
এক সপ্তাহ ধরে চলা উত্তাপ, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি
গত এক সপ্তাহ ধরে রাজশাহী, খুলনা, দিনাজপুর, নীলফামারী, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ ও টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় দিনের তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠছে। মধ্য দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত পথচারী, দিনমজুর ও খোলা আকাশের নিচে কাজ করা মানুষদের অবস্থা অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
রাস্তাঘাটে মানুষ কমে গেছে, অফিসগামী অনেকেই গরমের কারণে বাড়তি ক্লান্তি নিয়ে ঘরে ফিরছেন। হাসপাতালগুলোতে হিটস্ট্রোক, পানিশূন্যতা, মাথাব্যথা ও ত্বকের সমস্যায় ভুগছেন এমন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সায়েম রাহমান বলেন, "তাপপ্রবাহের সময় প্রচুর পানি পান করা জরুরি। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি জীবনসংকটের কারণ হতে পারে। মানুষকে এখনই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।"
আবহাওয়ার বিশদ পূর্বাভাস
আবহাওয়া অফিস জানায়, দেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চল হয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত একটি লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বিস্তৃত রয়েছে, যার কারণে কিছু এলাকায় বৃষ্টি ও বজ্রপাতের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল)
ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের অন্যান্য স্থানে আকাশ আংশিক মেঘলা এবং আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
শনিবার (২৬ এপ্রিল)
রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু জায়গায় দমকা হাওয়াসহ বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বাকি এলাকায় আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। তাপমাত্রার তেমন কোনো পরিবর্তন হবে না।
রোববার (২৭ এপ্রিল)
একইভাবে আটটি বিভাগের বেশ কিছু অঞ্চলে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।
সোমবার (২৮ এপ্রিল)
সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে আসতে পারে। রাতে তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতর আরও জানায়, বর্ধিত পাঁচ দিনেও বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।
জনমনে প্রত্যাশা, কৃষিখাতে আশার আলো
গরমে হাঁসফাঁস করা কৃষক সমাজও স্বস্তির আশায় আছে। নীলফামারীর কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, “আকাশে একটু মেঘ দেখলেই আশা করি, এবার হয়তো পানি পড়বে। জমি শুকিয়ে ফাটল ধরেছে। বৃষ্টিটা হলে বোরো ধানের শেষ ধাপটা রক্ষা পাবে।”
একইভাবে ফরিদপুরের গৃহিণী রুবিনা আক্তার বলেন, “তিন দিন ধরে এমন গরম পড়েছে যে রান্নাঘরে দাঁড়ানোই যায় না। মেঘ জমলেই মনে হয় এবার বুঝি স্বস্তি মিলবে।”
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
পরিবেশ গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ হানিফ বলেন, “এখনকার তাপপ্রবাহ শুধু আবহাওয়াগত নয়, এটি আমাদের নগর পরিকল্পনারও ফল। ঢাকাসহ বড় শহরগুলোয় সবুজের অভাব, জলাধার সংকোচন এবং অতিমাত্রায় কংক্রিটকরণের কারণে গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে। এখনই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. আবদুল হালিম বলেন, “তাপপ্রবাহে আক্রান্তদের জরুরি চিকিৎসা দেওয়া এবং জনসচেতনতা বাড়াতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে সক্রিয় রাখা হচ্ছে। স্কুল-কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখার বিষয়েও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।”
দেশজুড়ে ক্রমাগত তাপপ্রবাহ জনজীবনকে যে পর্যায়ে বিপর্যস্ত করেছে, তা থেকে কিছুটা স্বস্তি আনার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে আগামী কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসে। তবে স্বস্তির পাশাপাশি থাকছে সতর্কতার বার্তাও। তাপপ্রবাহ ও পরিবেশ পরিবর্তনের এই সংকটে জনসাধারণকে আরও বেশি সচেতন এবং সরকারকে আরও দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি উঠেছে নানা মহল থেকে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ