
ফাইল ছবি
২০২৫ সালের পুলিশ সপ্তাহ এবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একটি ভিন্ন পরিবেশে, যেখানে নতুন বিষয়গুলো উপস্থিত থাকবে এবং আগের বছরগুলোর কিছু ঐতিহ্যগত অনুষ্ঠান বাদ পড়েছে। এবার পুলিশের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে ছয়টি নির্দিষ্ট দাবি উত্থাপন করা হবে, যেগুলো পুলিশ সদস্যদের জন্য দীর্ঘদিনের চাহিদা ও সমস্যা সমাধানে সহায়ক হতে পারে।
আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাচ্ছে তিনদিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহ। এবার এটি রাজারবাগ পুলিশ লাইনস অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন। পুলিশ সপ্তাহের শুরুতেই বিশেষ দরবার অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে রাষ্ট্রপতি পদক এবং পুলিশ পদক প্রদান করা হবে।
এ বছরের পুলিশ সপ্তাহে কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যাবে। গত বছরের মতো এখানে প্যারেড বা শিল্ড প্যারেড, অন্যান্য প্রতিযোগিতা এবং ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে না। তবে নতুনভাবে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিয়ম সভা অনুষ্ঠিত হবে, যা পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রম ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে।
পুলিশ সদস্যদের পক্ষ থেকে এবার সরকারের কাছে ছয়টি বিশেষ দাবি উত্থাপন করা হবে, যা পুলিশ বাহিনীর কাজের পরিবেশ এবং সদস্যদের কল্যাণে সহায়ক হতে পারে। সূত্র অনুযায়ী, প্রথমে ১২টি দাবি উত্থাপিত হলেও, সেগুলোর মধ্যে ছয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
পুলিশের ছয়টি প্রধান দাবি: ১. স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন:
জনসাধারণের জন্য একটি কমপ্লেইন সেল এবং পুলিশের জন্য একটি অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটি গঠন। ২. এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ ভাতা: পুলিশ সদস্যদের জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার জন্য এই দাবি জানানো হয়েছে। ৩. স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট গঠন: দেশের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আলাদা সাইবার ইউনিট গঠনের দাবি। ৪. পুলিশের বিভাগীয় হাসপাতালের উন্নতি: আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদি সরবরাহের মাধ্যমে পুলিশ হাসপাতালের উন্নতি এবং একটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা। ৫. অবসরকালে পদোন্নতি প্রদান: একই পদে দীর্ঘদিন চাকরি করার পর অবসরকালে পুলিশ সদস্যদের সুপারনিউমারারি পদোন্নতি দেওয়ার দাবি। ৬. মৃতদেহ দাফন/সৎকারের সুবিধার্থে অর্থ বরাদ্দ: পুলিশ সদস্যদের জন্য মৃতদেহ দাফন বা সৎকারের সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য অর্থ বরাদ্দের দাবি।
এছাড়া, এবারের পুলিশ সপ্তাহে বিশেষভাবে আলোচিত হবে পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা আগামী জাতীয় নির্বাচনে। এর মাধ্যমে পুলিশকে নির্বাচনে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু ভূমিকা পালন করার জন্য স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হবে।
নতুন পদ্ধতিতে পদক প্রদান
বিপিএম ও পিপিএম পদক প্রদান কমিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং এবার অনেক কম সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে এই পদক দেওয়া হবে। এবার সারা বছর ধরে সাহসিকতা ও পেশাদারিত্বের জন্য পুলিশ সদস্যদের পদক দেওয়া হবে এবং এটি পুলিশ সপ্তাহে শুধুমাত্র সম্মাননা হিসেবে প্রকাশিত হবে।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন
এ বছর পুলিশ সপ্তাহের তিনদিনে ব্যাপক আয়োজন করা হয়েছে। ২৯ এপ্রিল দুপুরে বিশেষ দরবার অনুষ্ঠিত হবে এবং প্রধান উপদেষ্টা পুলিশের উদ্দেশ্যে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন। এর পর, আইজিপি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেবেন এবং বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটের প্রেজেন্টেশন অনুষ্ঠিত হবে। ৩০ এপ্রিল ও ১ মে বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে পুলিশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয় আলোচনা করা হবে।
এছাড়া, ১ মে দুপুরে নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে পুলিশ বাহিনীর ভবিষ্যৎ, তাদের কার্যক্রম এবং জনগণের প্রত্যাশা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হবে।
এবারের পুলিশ সপ্তাহের মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীর নানা দাবি এবং তাদের উন্নতির জন্য সরকারের কাছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা সুবিধা, এবং অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থার উন্নতি। পুলিশ বাহিনী ও সরকারের মধ্যে এই ধরনের সহযোগিতা এবং যোগাযোগ ভবিষ্যতে পুলিশের কার্যক্রমকে আরও দক্ষ এবং জনগণের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ