
ছবি: সংগৃহীত
জাতিসংঘের আদিবাসী-বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের ২৪তম অধিবেশনে বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। একই সঙ্গে সব নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় সরকার তার প্রতিশ্রুতি অব্যাহত রাখবে বলেও নিশ্চিত করেছে।
এই প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুল খালেক। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত এ ফোরামের অধিবেশনে বুধবার তিনি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন। আজ ঢাকায় প্রাপ্ত এক সরকারি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
জাতিসংঘের এই অধিবেশনটি শুরু হয়েছে ২১ এপ্রিল এবং তা চলবে আগামী ২ মে পর্যন্ত। বৈশ্বিকভাবে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার, সংস্কৃতি, এবং উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়াদি আলোচনার জন্য এই ফোরাম গুরুত্বপূর্ণ একটি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচিত।
সচিব আব্দুল খালেক তার বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি জানান, সরকার এই চুক্তির বাস্তবায়নে ধারাবাহিক অগ্রগতি সাধন করেছে এবং এ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বিশেষভাবে ভূমি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ঐতিহাসিক ও প্রশাসনিক কাঠামোর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে ভূমি ব্যবস্থাপনা এখনও ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ন্ত্রণ বিধানের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। এই ব্যবস্থাকে আরও সময়োপযোগী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তোলার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে।
সরকার পার্বত্য অঞ্চলে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জীবিকা, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতি সাধনে উল্লেখযোগ্য আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে—বক্তব্যে এ কথাও তুলে ধরা হয়। সচিব জানান, তিন পার্বত্য জেলায় (রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি) স্থানীয় জনগণের জীবনমান উন্নয়নে ব্যাপক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রদত্ত বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রাষ্ট্র তার সংবিধান অনুযায়ী সব জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও ঐতিহ্যকে শ্রদ্ধা করে এবং সেগুলোর সংরক্ষণ ও বিকাশে অঙ্গীকারাবদ্ধ। বাংলাদেশ সরকার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভাষা, পোশাক, উৎসব, রীতি-নীতি এবং জীবনধারাকে সম্মান করে এবং জাতীয় উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় তাদের সম্পৃক্ত রাখতে নীতি গ্রহণ করেছে।
এই বক্তব্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিনের বিরোধ নিরসনে স্বাক্ষরিত শান্তিচুক্তি কেবল কাগজে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারের অঙ্গীকার কেবল অভ্যন্তরীণ নয়, বরং তা আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি ছিল দীর্ঘদিনের সহিংসতা ও অস্থিরতার পর শান্তির পথে একটি বড় পদক্ষেপ। তবে দুই দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এর পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি বলে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি ওঠে। এ প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘে সরকারের পক্ষ থেকে এই প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করাকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘে এই বার্তা প্রদানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের দায়বদ্ধতা ও উদ্যোগের ইতিবাচক প্রতিচ্ছবি উপস্থাপিত হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ