
ছবি: সংগৃহীত
আজ শনিবার রোমের ভ্যাটিকান সিটির ঐতিহাসিক সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা প্রাঙ্গণে সম্পন্ন হচ্ছে ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রয়াত ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের (৮৮) শেষকৃত্য। গোটা বিশ্বের কোটি কোটি ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীর আত্মিক নেতৃত্বদানকারী এই ধর্মীয় মহাপুরুষের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ বিশ্ব। তাকে শেষ বিদায় জানাতে ভ্যাটিকানে জড়ো হয়েছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, রাজপরিবারের সদস্য এবং ধর্মগুরুদের বিশাল বহর।
বাংলাদেশ থেকেও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি কাতার হয়ে গতকাল রোমে পৌঁছান এবং সন্ধ্যা ৭টার দিকে পোপ ফ্রান্সিসের কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ভ্যাটিকান জানিয়েছে, শনিবার সকাল ১০টা (বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা) থেকে শুরু হয়েছে শেষকৃত্যের আনুষ্ঠানিকতা।
পোপ ফ্রান্সিসের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী, তার মরদেহ রাখা হয়েছে কাঠ ও দস্তার তৈরি বিশেষ কফিনে, যা প্রথমে চার্চের ভেতরে রাখা হয় এবং পরে দাফনের জন্য নেওয়া হবে রোমের সান্তা মারিয়া ম্যাগিওর গির্জায়। সেখানে পোপদের জন্য নির্ধারিত বিশেষ সমাধিস্থলে তার দাফন সম্পন্ন হবে।
শেষকৃত্য পরিচালনা করছেন কলেজ অব কার্ডিনালের ডিন, কার্ডিনাল জিওভান্নি ব্যাতিস্তা, যার নেতৃত্বে চলে একটি পূর্ণাঙ্গ গণপ্রার্থনা অনুষ্ঠান। এতে অংশ নিচ্ছেন গোটা বিশ্বের কার্ডিনাল, আর্চবিশপ, বিশপ, সন্ন্যাসী ও ফাদাররা। এ অনুষ্ঠান শেষে নয় দিনের শোক পালন শুরু হবে, যা ক্যাথলিক রীতি অনুযায়ী আত্মার শান্তির জন্য আয়োজন করা হয়।
পোপ ফ্রান্সিসের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভ্যাটিকানে উপস্থিত হয়েছেন একঝাঁক প্রভাবশালী বিশ্বনেতা। এদের মধ্যে রয়েছেন—
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন
জার্মানির বিদায়ী চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ
ব্রিটেনের যুবরাজ উইলিয়াম
আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই
অনুষ্ঠানে আরও অংশ নিচ্ছেন বিশ্বের বিভিন্ন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও অন্যান্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল। বিশ্ব গণমাধ্যমের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, একবিংশ শতাব্দীতে এ ধরনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও সমবেত শোকানুষ্ঠান বিরল।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হয়েছে প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূস ভ্যাটিকান সরকারের আমন্ত্রণে শেষকৃত্যে অংশ নিচ্ছেন। তার সফরসঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেন পররাষ্ট্র ও ধর্ম বিষয়ক দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। শুক্রবার সন্ধ্যায় রোম পৌঁছে সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে পৌঁছান তিনি এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
গত সোমবার (২১ এপ্রিল) রাতে পোপ ফ্রান্সিস মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মারা যান। এর আগে তিনি দীর্ঘ পাঁচ সপ্তাহ নিউমোনিয়ায় ভুগে হাসপাতালে ছিলেন। হাসপাতাল থেকে ফিরে কিছুদিন বিশ্রামে ছিলেন তিনি। তবে শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়ায় বার্ধক্যজনিত দুর্বলতা থেকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হন।
পোপের মৃত্যুতে রোমান ক্যাথলিক চার্চে এখন শুরু হয়েছে নতুন পোপ নির্বাচন প্রক্রিয়া। গত মঙ্গলবার ভ্যাটিকানে অনুষ্ঠিত এক গোপন বৈঠকে ধর্মগুরুদের একটি কমিটি পরবর্তী পোপ নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেছে। ক্যাথলিক চার্চের ঐতিহ্য অনুযায়ী, তিন সপ্তাহের মধ্যে কনক্লেভ ডেকে ভোটাভুটির মাধ্যমে নতুন পোপ নির্বাচন করতে হয়। এ প্রক্রিয়ায় গোপন ব্যালটে ভোট দেন নির্বাচিত কার্ডিনালরা।
২০১৩ সালে পদত্যাগকারী পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টের স্থলাভিষিক্ত হয়ে রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রথম লাতিন আমেরিকান পোপ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন জর্জ মারিও বেরগোগ্লিও, যিনি পরিচিত হন পোপ ফ্রান্সিস নামে। তিনি আর্জেন্টিনার বুয়েনস এইরেসে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখান থেকে জেসুইট পুরোহিত হিসেবে যাত্রা শুরু করেন।
তার পোপাল দায়িত্বকালে তিনি:
গরিবদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হন
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বিশ্ব নেতাদের সচেতনতা বাড়ান
খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মের মধ্যকার পারস্পরিক সম্মান এবং শান্তির আহ্বান জানান
চার্চের ভেতরে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সরব ভূমিকা রাখেন
তার মৃত্যুকে অনেকে ‘একটি যুগের অবসান’ হিসেবে দেখছেন।
আজকের দিনটি শুধু রোমান ক্যাথলিকদের জন্য নয়, পুরো বিশ্বের জন্য এক আবেগঘন অধ্যায়ের সমাপ্তি। শান্তির দূত, দরিদ্রদের বন্ধু এবং ধর্মীয় সহনশীলতার প্রতীক পোপ ফ্রান্সিসের প্রতি বিশ্বের শ্রদ্ধাঞ্জলি নিঃসন্দেহে ইতিহাসে এক মহৎ মুহূর্ত হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ