
ছবি: সংগৃহীত
সারা দেশের মানুষ কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। টানা পাঁচ দিন ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বইছে, যার ফলে তাপমাত্রার পারদ ক্রমাগত চড়ছে এবং জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তবে কিছুটা স্বস্তির খবর দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। সংস্থাটি জানিয়েছে, আগামী সোমবার (২৮ এপ্রিল) থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে, যার ফলে তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, দেশের কিছু এলাকায় বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে, যা তাপপ্রবাহ প্রশমিত করতে সহায়ক হবে। বৃষ্টি হলে দিনের তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমতে পারে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে। রাতের তাপমাত্রাতেও সামান্য কমতির সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশেষ করে রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় এবং রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু অঞ্চলে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এইসব অঞ্চলের মানুষজন কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
আবহাওয়া অফিস আরও জানিয়েছে, এর আগ পর্যন্ত শনিবার (২৬ এপ্রিল) দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। রাজশাহী বিভাগসহ দিনাজপুর, যশোর এবং চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে বর্তমানে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং সেটি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। শনিবার সারাদেশের দিনের ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে বলেও পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সিলেটে, যেখানে তাপমাত্রা নেমেছে ২১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। অপরদিকে রাজধানী ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ২৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় যথেষ্ট বেশি।
গরমের এই দাপটে জনজীবন কষ্টকর হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে দুপুরের সময় রাস্তাঘাট, অফিস-আদালত, বাজারসহ নানা জায়গায় জনসাধারণকে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে গরমজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলেও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, এই সময়ে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা, সূর্যের প্রখর আলো এড়িয়ে চলা এবং বাইরে বের হলে ছাতা বা টুপির ব্যবহার নিশ্চিত করার।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে দেশের ওপর দিয়ে যে তাপপ্রবাহ বইছে তা মূলত মৌসুমি লঘুচাপের কারণে সৃষ্টি হয়েছে। যদি সোমবার থেকে প্রত্যাশিত বৃষ্টিপাত শুরু হয়, তাহলে এই মৌসুমি লঘুচাপ কিছুটা দুর্বল হয়ে আসবে এবং দেশের অধিকাংশ অঞ্চলের তাপমাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসবে। তবে তারা সতর্ক করে বলেছেন, বৃষ্টি হলেও কোথাও কোথাও হঠাৎ দমকা হাওয়া, বজ্রপাত ও অস্থায়ী ঝড়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
অন্যদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, কালবৈশাখীর মৌসুম হওয়ায় আগামী কয়েকদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দফায় দফায় বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। ফলে মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সারাদেশেই তাপপ্রবাহের প্রবণতা উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সবমিলিয়ে, কয়েকদিনের গরমের যন্ত্রণার পর দেশের মানুষ একটু স্বস্তির জন্য বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে। আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, আগামী সপ্তাহের শুরু থেকেই বৃষ্টির ফোঁটায় মিলতে পারে সেই কাঙ্ক্ষিত স্বস্তি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ