
ছবি: সংগৃহীত
কুরবানি ঈদের আগে দেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য বড় একটি সুখবর দিল সরকার। এতদিন ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা পেলেও, এখন থেকে তারা পাবেন ৫০ শতাংশ হারে উৎসব ভাতা। আগামী ঈদুল আজহা থেকেই এই নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
এতে করে শিক্ষক ও কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে, যা শিক্ষা খাতের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সরকারের সিদ্ধান্ত ও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টের মাধ্যমে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য এই সুখবর জানান। তিনি লেখেন, "আসন্ন ঈদুল আজহা থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা ৫০ শতাংশ উৎসব ভাতা পাবেন।" এ সিদ্ধান্তের ফলে প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষক ও কর্মচারী সরাসরি উপকৃত হবেন।
এর আগে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মূলত ২৫ শতাংশ হারে উৎসব ভাতা পেতেন, যেখানে একই প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচারীরা আগে থেকেই ৫০ শতাংশ হারে ভাতা পেয়ে আসছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে এ বৈষম্য দূর করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন শিক্ষকরা। এবার তা বাস্তবায়ন হওয়ায় শিক্ষক সমাজে স্বস্তির আমেজ দেখা দিয়েছে।
ব্যয়ের হিসাব
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে প্রতি ঈদে সরকারের অতিরিক্ত ২২৯ কোটি টাকা খরচ হবে। তিনি বলেন, "বর্তমানে সারা দেশে প্রায় পাঁচ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারী রয়েছেন। তাদের বেতনের মূল অংশ এবং বিভিন্ন ভাতা সরকার প্রদান করে থাকে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঈদের উৎসব ভাতা ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগামী ঈদুল আজহা থেকেই কার্যকর হবে।"
পূর্ববর্তী পরিকল্পনার ধারাবাহিকতা
এ সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে পূর্বপ্রস্তুতির একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এর আগেই এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলেন। চলতি বছরের ৫ মার্চ, শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব ছাড়ার দিন তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের উৎসব ভাতা, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও বিনোদন ভাতা বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে এবং তা ঈদুল আজহা থেকে কার্যকর হবে।
এই ঘোষণার আলোকেই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে উৎসব ভাতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হলো। এটি শিক্ষকদের আর্থিক স্বস্তি বাড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষা পেশাকে আরও মর্যাদাপূর্ণ করে তুলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
শিক্ষক সমাজের প্রতিক্রিয়া
নতুন সিদ্ধান্তে শিক্ষক সমাজে ব্যাপক সন্তোষ দেখা দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, দীর্ঘদিনের বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে তাদের ন্যায্য দাবি পূরণ হলো। বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের নেতারা এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং অবিলম্বে অন্য ভাতাগুলোকেও দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি তুলেছেন।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির এক নেতা বলেন, "আমরা অনেক বছর ধরে এই দাবি করে আসছিলাম। ঈদের আগে এমন সুখবর পেয়ে আমরা আনন্দিত। তবে উৎসব ভাতার পাশাপাশি বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ও বিনোদন ভাতা বাড়ানোর যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, তা যেন দ্রুত কার্যকর হয়, সেই দাবি করছি।"
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, কেবল উৎসব ভাতা নয়, শিক্ষক-কর্মচারীদের অন্যান্য ভাতাও পর্যালোচনা করে বাড়ানোর প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে। বিশেষ করে চিকিৎসা ভাতা ও বাড়িভাড়া ভাতায় দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্য রয়েছে, যা দূর করতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, "আমরা সামগ্রিকভাবে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। ধাপে ধাপে অন্যান্য ভাতাও সমন্বয় করা হবে। এতে শিক্ষকরা আরও মনোযোগের সঙ্গে শিক্ষাদানে নিয়োজিত হতে পারবেন।"
কুরবানি ঈদের আগে এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য উৎসব ভাতা বৃদ্ধি সরকারের পক্ষ থেকে এক ইতিবাচক পদক্ষেপ। এতে শিক্ষক সমাজ যেমন অনুপ্রাণিত হয়েছে, তেমনি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি নতুন আশাবাদের সৃষ্টি হয়েছে।
সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে শুধু আর্থিকভাবেই নয়, পেশাগত মর্যাদাতেও শিক্ষকরা আগের চেয়ে আরও বেশি সম্মানিত বোধ করবেন বলে আশা করা যায়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ