
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে আগামী সাধারণ নির্বাচন আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে, এমনটাই জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম। শনিবার (২৬ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ইতালির রোমে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। শফিকুল আলম আরও জানিয়েছেন যে, এই সময়ের মধ্যে যাবতীয় নির্বাচনকালীন সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হবে এবং নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পরই নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হবে।
নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থান
প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানান, প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস একাধিকবার নির্বাচনের বিষয়ে জানিয়ে বলেছেন, "ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে," এবং সংস্কার কাজ চলমান থাকবে। তিনি এসময় বলেন, "বিষয়টি সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং নির্বাচন নির্ধারণের পর সব দিক সঠিকভাবে পরিচালিত হবে।"
নির্বাচনের তারিখ এখনও নির্ধারিত না হলেও, সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত শেষ হবে এবং নির্বাচনটি কোন রকম দেরি ছাড়াই অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি। শফিকুল আলম আরও বলেন, "আমরা জানি জনগণের প্রত্যাশা কী, আর আমরা তা পূরণ করতে কঠোর পরিশ্রম করছি।"
সংস্কার কাজের অগ্রগতি
প্রেস সচিব স্পষ্টভাবে জানান, নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের পূর্বে সমস্ত সংস্কার কার্যক্রম শেষ করা হবে। সরকারের পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে যাতে নিশ্চিত করা যায় যে নির্বাচনী প্রক্রিয়া সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হবে। তিনি বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব এই সংস্কার কাজ শেষ করতে চাই। নির্বাচনের জন্য কোনো একদিনও অযথা বিলম্ব হবে না।"
জনগণের আকাঙ্ক্ষা
প্রেস সচিবের বক্তব্যে আরও উঠে আসে যে, বাংলাদেশের জনগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি যে আস্থাশীল, সেটি কোনভাবেই উপেক্ষিত হবে না। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, "জনগণ যা চায় তা সরকার অবশ্যই বিবেচনায় নেবে, তবে সেটা কিভাবে বাস্তবায়িত হবে তা সরকারের সিদ্ধান্ত।"
পোপের শেষকৃত্যে শ্রদ্ধা
শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার ভ্যাটিকান সফরও উল্লেখ করেন। তিনি জানান, ড. মোহাম্মদ ইউনূস ইতালির রোমে এসে পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন। শফিকুল আলম বলেন, "পোপের সঙ্গে ড. ইউনূসের অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। ভ্যাটিকানের সঙ্গে সেই সম্পর্ক বজায় রাখতে তিনি সফরে গিয়েছিলেন এবং পোপের শেষকৃত্যে শ্রদ্ধা জানান।"
এসময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব নেতাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎও অনুষ্ঠিত হয়। এতে কমপক্ষে ১৩০টি দেশের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা ভ্যাটিকানে এসে পোপের শেষকৃত্যে শ্রদ্ধা জানান।
ইতালিতে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ
ইতালিতে সফরের সময়, ড. ইউনূসের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি দলগুলোর সাক্ষাৎ হয়েছিল। ইতালিতে বাংলাদেশি প্রবাসীদের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। রোমে আগত সংবাদ মাধ্যমগুলো প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ নিতে সময় চেয়ে আবেদন জানিয়েছিল এবং বৈঠকগুলো এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এছাড়া, ভ্যাটিকানের একটি প্রতিনিধি দলও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন।
বাংলাদেশের ইতালিতে ব্যবসায়িক সম্প্রসারণ
প্রেস সম্মেলনে বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত এটিএম রফিকুল হকও বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ইতালিতে বাংলাদেশি ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে গার্মেন্টস উদ্যোক্তারা ইতালিতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। ইতালির বাজারে বাংলাদেশি সিরামিক পণ্যও পৌঁছেছে, যা ইতালির বাজারে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও শক্তিশালী করছে।
এদিকে, রাষ্ট্রদূত আরও উল্লেখ করেন, "বাংলাদেশি গার্মেন্টস উদ্যোক্তারা ইতালির বাজারে নতুন নতুন উদ্ভাবনী পণ্য নিয়ে এসেছে, যা ইতালির ভোক্তা বাজারে বাংলাদেশের প্রতিকৃতি উন্নত করেছে।"
প্রধান উপদেষ্টার বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা
জেনেভায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক মো. আরিফুল ইসলাম প্রধান উপদেষ্টার বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে বিশেষ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, "ড. ইউনূসের আন্তর্জাতিক নেতৃত্বের গ্রহণযোগ্যতা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তিনি বিশ্ব নেতাদের কাছে সম্মানিত এবং বাংলাদেশের অবদানকে গর্বিতভাবে তুলে ধরেন।"
মিশন কর্মকর্তাদের উপস্থিতি
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আলমসহ রোম দূতাবাসের বিভিন্ন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া, রাষ্ট্রদূত রফিকুল হক বাংলাদেশের ইতালিতে ব্যবসায়িক সম্পর্ক বৃদ্ধি নিয়ে আরও আলোচনা করেন এবং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক চিত্রকেও আরও সুদৃঢ় করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানান।
বাংলাবার্তা/এমএইচ