
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের পুঞ্জিভূত সংকট উত্তরণের জন্য দীর্ঘদিনের আলোচনা ও প্রস্তাবনার ফলস্বরূপ, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, দ্রুত সময়ের মধ্যে জুলাই সনদ তৈরি হবে। সম্প্রতি ২৭ এপ্রিল, রোববার, জাতীয় সংসদের এলডি হলে গণসংহতি আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে আয়োজিত বৈঠকের শুরুতে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী শাসকদের পরাজয়ের পেছনে জনসাধারণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। তিনি বলেন, "ঐক্যের চেতনাকে ধারণ করে আমাদের অগ্রসর হতে হবে। এটি শুধু আমাদের অঙ্গীকার নয়, আমাদের দায়।" তার মতে, সংকটের সমাধানে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের জন্য ঐকমত্য গঠন এবং গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি।
সংস্কার কমিশনগুলো দীর্ঘদিন ধরে পুঞ্জিভূত সংকটের মোকাবিলা করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে এবং এর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবও এসেছে। তবে, অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়ে দেন, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়নই যথেষ্ট নয়। তার মতে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কাঠামো তৈরি এবং গণতন্ত্রের চর্চা জরুরি। এজন্য প্রয়োজন গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর একত্রিত থাকা এবং একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ আরও বলেন, "আমরা কিছুটা অগ্রগতি অর্জন করতে পেরেছি, কিন্তু এটি ধরে রাখা এবং বিকশিত করতে না পারলে সমস্ত সুযোগ হারিয়ে যাবে।" তাই, এ অর্জনকে সুরক্ষিত রাখতে এবং এটি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য টেকসই করতে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার উপর জোর দেন তিনি। তার মতে, বাংলাদেশের ভবিষ্যত এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা শুধুমাত্র এই অর্জনের উপর নির্ভরশীল।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, যদি সকল অংশীজন একমত হন, তবে দ্রুততার সঙ্গে জাতীয় সনদ তৈরি করা সম্ভব হবে। এর ফলে দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথ সুগম হবে। এই প্রক্রিয়াটি বাংলাদেশকে একটি নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বৈঠকে বলেন, "যেসব বিষয়গুলো অংশীজনদের মধ্যে ঐকমত্য তৈরি হবে, সেগুলোই জুলাই সনদ হিসেবে গৃহীত হবে। আর যেগুলোতে ঐকমত্য হবে না, সেগুলো নিয়ে জনগণের কাছে যেতে হবে।" তিনি মনে করেন, ঐকমত্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথে হাঁটবে এবং এই পরিবর্তন দেশ ও জনগণের জন্য মঙ্গলজনক হবে।
জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, যারা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছেন, তারা রাষ্ট্রকে নিজেদের সুবিধার জন্য ব্যবহার করেছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন, "শেখ হাসিনা রাষ্ট্রকে ব্যবহার করেছে বলেই এমন পরিণতি হয়েছে।" তিনি আরও বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নানা সংকটে জড়িয়ে পড়েছে।
এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, ড. বদিউল আলম মজুমদার, এবং ড. ইফতেখারুজ্জামান। বৈঠকের সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
এ বৈঠকটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উন্নয়ন এবং সংকট উত্তরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। অংশীজনদের ঐকমত্য এবং কার্যকর সংস্কারের প্রক্রিয়ায় শীঘ্রই সঠিক পথনির্দেশনা পাওয়া যাবে, যদি সব পক্ষ সম্মিলিতভাবে একে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ