
ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার চলমান উত্তেজনা নিরসনে আলাপ-আলোচনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ মনে করে, কাশ্মির ইস্যুসহ বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় সমস্যা দুই দেশ নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেই সমাধান করবে। তবে তাদের অনুরোধ ছাড়া বাংলাদেশ কোনো মধ্যস্থতার উদ্যোগ নেবে না বলে স্পষ্ট করেছে ঢাকা।
রোববার (২৭ এপ্রিল) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, "বাংলাদেশের অবস্থান খুবই পরিষ্কার—আমরা চাই দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি বজায় থাকুক। আমরা চাই না ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে এমন কোনো বড় ধরনের সংঘাত হোক, যা এ অঞ্চলের মানুষের জন্য অশান্তি ও বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।"
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, "ভারত ও পাকিস্তান দুটোই আমাদের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র। আমরা দুই দেশের সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই অঞ্চলে শান্তি বজায় থাকলে বাংলাদেশের জন্যও উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথ সহজ হয়। ফলে কোনো প্রকার উত্তেজনা বা সংঘাত আমরা সমর্থন করি না।"
তিনি বলেন, "ভারত-পাকিস্তান নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করুক—এটাই আমাদের প্রত্যাশা। প্রয়োজন হলে এবং তারা চাইলে বাংলাদেশ তখন মধ্যস্থতার ভূমিকা বিবেচনা করতে পারে। কিন্তু এখনই আগবাড়িয়ে কোনো ভূমিকা নেওয়ার প্রয়োজন দেখছি না।"
সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারত-পাকিস্তান সমস্যা সমাধানে কিছু দেশের মধ্যস্থতার প্রস্তাব এসেছে। ইরান ও সৌদি আরব ইতোমধ্যে দ্বিপক্ষীয় উত্তেজনা প্রশমনে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল—বাংলাদেশও কি মধ্যস্থতার জন্য এগিয়ে আসবে?
জবাবে মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, "আমি মনে করি, আমাদের এখন কোনো আগ্রাসী উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন নেই। ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশেরই অভিজ্ঞ কূটনীতিক ও নেতৃত্ব রয়েছে, যারা আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম। আমাদের উচিত তাদের নিজেদের মত করে সমাধানের সুযোগ দেওয়া। যদি একসময় তারা বাংলাদেশকে সরাসরি সহায়তার জন্য আহ্বান জানায়, তখন আমরা বিষয়টি বিবেচনা করবো।"
বাংলাদেশ বরাবরই দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, আঞ্চলিক সহযোগিতা ও উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’ নীতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অনুসারে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, "আমরা চাই, আঞ্চলিক উত্তেজনার কারণে যেন উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত না হয়। বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির ধারা বজায় রাখতে চায় এবং এজন্য দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। ভারত-পাকিস্তান যদি নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছাতে পারে, তাহলে গোটা অঞ্চল উপকৃত হবে।"
বাংলাদেশের অবস্থান আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে ইতিবাচক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে নিরপেক্ষ ও পরিমিত প্রতিক্রিয়া প্রদর্শনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আঞ্চলিক কূটনীতিতে ভারসাম্যের একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে।
বাংলাদেশের শান্তি ও উন্নয়নের প্রতি দায়বদ্ধতাকে সামনে রেখে সরকার কোনো প্রকার অস্থিরতা সৃষ্টি না করে বরং সংযত ও কৌশলী ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছে। মধ্যস্থতা বিষয়ে বাংলাদেশের স্পষ্ট বার্তা হলো—তৃতীয় পক্ষের ভূমিকা তখনই গ্রহণযোগ্য, যখন সংশ্লিষ্ট পক্ষরা তা চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের এই সংযত অবস্থান দক্ষিণ এশীয় ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশটির কূটনৈতিক গ্রহণযোগ্যতাকে আরও দৃঢ় করবে।
বর্তমানে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ শান্তির পক্ষেই অটল রয়েছে। দ্বিপক্ষীয় আলোচনা, সমঝোতা এবং আঞ্চলিক শান্তির জন্য বাংলাদেশ সহায়ক শক্তি হিসেবে প্রস্তুত থাকলেও, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে মধ্যস্থতার উদ্যোগ গ্রহণের পক্ষে নয়। এই পরিমিত ও সংযত কূটনৈতিক অবস্থান বাংলাদেশের নীতিগত পরিপক্বতারই বহিঃপ্রকাশ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ