
ছবি: সংগৃহীত
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা ও অনিয়ম দূর করতে সরকার দুটি নতুন সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
রবিবার বিকেলে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি উল্লেখ করেন, উপদেষ্টা পরিষদের সর্বশেষ বৈঠকে পিএসসি সংক্রান্ত বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয় এবং সার্বিক বিশ্লেষণের পর দুটি পিএসসি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দীর্ঘসূত্রতা ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপ
আসিফ মাহমুদ তার পোস্টে বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বারবার দেখা দেওয়া দীর্ঘসূত্রতা এবং অনিয়মের অভিযোগগুলোর প্রেক্ষিতে সরকার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে দেখছে। সর্বশেষ ক্যাবিনেট মিটিংয়ে এ বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
তিনি জানান, আন্দোলন শুরু হওয়ার পরপরই যারা নিয়োগ প্রক্রিয়ার দায়িত্বে আছেন, তাদের কাছে ছাত্র-যুবকদের দাবি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। যদিও গত সোমবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একটি আনুষ্ঠানিক বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, তা শেষ মুহূর্তে সম্ভব হয়নি বলে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, "আমার পক্ষ থেকে ছাত্রদের দাবিগুলো বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। কোনো দাবি যাতে উপেক্ষিত না হয়, সে জন্য আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং ভবিষ্যতেও চেষ্টা করে যাব ইনশাআল্লাহ।"
সরকারি নিয়োগে অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বেকারত্ব নিরসনে সরকারের উদ্যোগ নিয়েও কথা বলেন আসিফ মাহমুদ। তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে পুলিশের পর সবচেয়ে বেশি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। নিয়োগ প্রক্রিয়াও দ্রুত এগোচ্ছে।
তিনি জানান, সামনের কয়েক মাসের মধ্যেই আরো অন্তত ১০ হাজার পদে নিয়োগ সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে পিএসসির মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সরাসরি সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার তার নেই বলেও স্পষ্ট করে দেন তিনি। "আমার পক্ষে পিএসসি নিয়ে সরাসরি কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া বা ডিক্টেট করা সম্ভব নয়। তবে আমি আমার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি,"— যোগ করেন উপদেষ্টা।
আন্দোলনকারীদের প্রতি সহমর্মিতা ও দায়িত্ববোধ
ছাত্র-যুব আন্দোলনের প্রতি নিজের সংবেদনশীলতা ও দায়িত্ববোধের কথাও বিস্তারিতভাবে ব্যক্ত করেন আসিফ মাহমুদ।
তিনি লেখেন, "যত ব্যস্ততাই থাকুক, ছাত্রদের বিষয় সবসময় আমার প্রথম অগ্রাধিকার।" কুয়েট আন্দোলনের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, কুয়েটের প্রতিনিধিদল বাসায় এসেছিলো এবং তাদের দাবি পরদিনই শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে তিনি নিজ হাতে পৌঁছে দেন। এরপর নিয়মিত আপডেট রেখেছেন এবং দাবি মেনে নেওয়ার প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে কাজ করেছেন।
তিনি আরো বলেন, "শুধু ফেসবুকে না বললেই যে কাজ হচ্ছে না—এমনটি ধরে নেওয়া ঠিক নয়। অনেক কাজ নীরবে হয়ে থাকে।"
রাজু ভাস্কর্যের আন্দোলন এবং ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা
রাজু ভাস্কর্যের সামনে টিএসসিতে চলমান অনশনের প্রতি সংবেদনশীলতা প্রকাশ করে আসিফ মাহমুদ জানান, তিনি রাত ৪-৫টার দিকে সেখানে গিয়েছিলেন। তবে রাতে সেখানে উপস্থিতি কতটা উপযুক্ত হবে, তা ভেবে শেষপর্যন্ত ফিরে আসেন।
এছাড়া শহীদ জসিম ভাইয়ের মেয়ের আত্মহত্যার ঘটনায় সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভোররাতে গিয়ে নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার প্রসঙ্গও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের জামিনের কোনো খবর সঠিক নয়। বরং এই ঘটনায় অভিযুক্তদের সিআইডিতে রাখা হয়েছে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে আইন মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিএসসি এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা
পিএসসি যে একটি সাংবিধানিক, স্বাধীন এবং স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান, তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, "পিএসসি নিয়ে সরাসরি কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করা হবে।"
পোস্টের শেষাংশে তিনি আশ্বাস দেন, তিনি ছাত্র-যুবদের দাবি ও স্বার্থের প্রতি সবসময়ই অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবেন এবং সরকারও নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ, দ্রুত ও জবাবদিহিমূলক করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেবে।
সরকারের দুটি নতুন পিএসসি গঠনের সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের চাকরি প্রত্যাশী যুবসমাজের জন্য একটি বড় অগ্রগতি। দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ প্রক্রিয়ার ধীরগতি ও অনিয়ম নিয়ে যেসব অভিযোগ উঠছিল, তা নিরসনের পথে এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
আন্দোলনরত ছাত্র-যুবদের দাবির প্রতি সরকার যে সংবেদনশীলতা দেখাচ্ছে এবং উপদেষ্টারা যে নীরবে-নিভৃতে তাদের দাবি আদায়ে কাজ করছেন, তা এই পরিস্থিতিতে আশাব্যঞ্জক বার্তা দিচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কত দ্রুত এবং কতটা কার্যকর ভূমিকা পালন করা যায়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ