
ছবি: সংগৃহীত
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে গত শনিবার পর্যন্ত আরও এক লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, যা উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ইতোমধ্যে, বাংলাদেশ এবং জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) যৌথভাবে তাদের আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করেছে। তবে, নতুন আসা রোহিঙ্গাদের আইরিশের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্তের অনুমতি এখনও সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি। এর ফলে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মোট রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন ১৩ লাখ ১৩ হাজারে পৌঁছেছে।
ইউএনএইচসিআর গত সপ্তাহে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছে, যাতে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের জন্য আবাসস্থল ব্যবস্থার অনুরোধ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এই চিঠি পাওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার মৌখিকভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, চলমান পরিস্থিতিতে এক লাখেরও বেশি নতুন রোহিঙ্গার জন্য আবাসস্থল তৈরি করা কঠিন।
প্রতিদিন রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশের প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে, এবং বর্তমানে কক্সবাজারের ২০টি ক্যাম্পে তাদের বসবাস চলছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে ১ হাজার ৪৪৮টি পরিবারসহ ৫ হাজার ৯৩০ জন নতুন রোহিঙ্গা এসেছে। তারা বেশিরভাগ কক্সবাজারে বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থান করছে। কিছু রোহিঙ্গা আত্মীয়দের বাসায় আশ্রয় নিয়েছে, তবে তাদের জন্য নির্দিষ্ট আবাসস্থলের ব্যবস্থা এখনো হয়নি।
নতুন আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৫৩.৭৭% নারী এবং বাকি অংশ পুরুষ। এই রোহিঙ্গাদের বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি সংখ্যা ১৮-৫৯ বছর বয়সী নারী এবং পুরুষের। ৬০ বছরের বেশি বয়সী রোহিঙ্গার সংখ্যা ৭,৮২০, এবং ১-৪ বছরের শিশুদের মধ্যে ১৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের জন্য নতুন রোহিঙ্গাদের আবাসস্থলের ব্যবস্থা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ ইতিমধ্যে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশের কক্সবাজার ও উখিয়া অঞ্চলে বসবাস করছে। এরই মধ্যে সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চেষ্টা করছে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য, তবে মিয়ানমারে স্থিতিশীলতা না থাকার কারণে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম অগ্রগতি লাভ করতে পারেনি।
মিয়ানমারের সেনাশাসন, জান্তা সরকার এবং আরাকান আর্মির সংঘাতে রোহিঙ্গাদের চলমান দুর্ভোগের কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিভিন্ন আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে। তবে, দাতা সংস্থাগুলোর অর্থনৈতিক সহায়তার পরিমাণ কমে আসছে। বিশেষত, ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা হ্রাস পেয়েছে, যা বাংলাদেশে নতুন রোহিঙ্গা আশ্রয়ের বিষয়ে আরেকটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরআরআরসি কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, “এক লাখের বেশি নতুন রোহিঙ্গার জন্য আবাসস্থলের ব্যবস্থা করা অসম্ভব।” তিনি আরও বলেন, “নতুন রোহিঙ্গাদের আবাসস্থল নির্মাণের পরিকল্পনা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে কঠিন করে তুলবে, কারণ এতে রাখাইনে থাকা অন্য রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসার জন্য আরও উৎসাহিত হবে।”
বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা ঘর তৈরি করা সম্ভব না হলে, দোতলা ঘর তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া যেতে পারে। তবে, সরকার এখনও এ বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।
বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রিত হওয়ায় নানামুখী নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ এবং অর্থনৈতিক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নতুন রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশ আরও বড় সংকটের দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্প এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
সাম্প্রতিক কিছু সূত্রের মতে, বাংলাদেশ সরকারের জন্য রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন এবং নতুন রোহিঙ্গাদের জন্য যথাযথ আবাসস্থল ব্যবস্থা করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে এই সংকটের সমাধান জরুরি হয়ে পড়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ