
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব
দেশে অনলাইন জুয়া ও বেটিং কার্যক্রমের লাগাম টানতে দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। খুব শিগগিরই পাস হতে যাচ্ছে নতুন সাইবার সুরক্ষা আইন, যেখানে অনলাইন জুয়া ও এর মাধ্যমে অর্থপাচার বন্ধে কঠোর বিধান রাখা হয়েছে। আইনটি পাস হওয়ার পর অনলাইন জুয়ায় জড়িত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং এদের সহযোগী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) রাতে এক ফেসবুক পোস্টে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব। তিনি জানিয়েছেন, "কয়েক দিনের মধ্যেই নতুন সাইবার সুরক্ষা আইনটি পাস হবে ইনশাআল্লাহ।"
ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব বলেন, "এই আইনে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, সাইবার স্পেসে কোনো ধরনের জুয়া বা বেটিং পরিচালনা বা অংশগ্রহণ বৈধ হবে না। আইন পাস হওয়ার পরে শুধু ব্যক্তিকে নয়, জড়িত কম্পানিকেও শাস্তির আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি বেটিং সাইটগুলো সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।"
তিনি আরও স্পষ্ট করে জানান, আইন কার্যকর হওয়ার সাথে সাথেই মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) কোম্পানি, ব্যাংক, ফাইন্যান্সিয়াল হাউজ, পেমেন্ট গেটওয়ে, পিএসও (পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটর), পিএসপি (পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার) সহ সকল সংস্থার ভূমিকা খতিয়ে দেখা হবে যারা অনলাইন জুয়া কোম্পানির সঙ্গে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে সংযুক্ত।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন মহলে জোরালো অভিযোগ উঠেছে, কয়েকটি এমএফএস কোম্পানি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনলাইন জুয়া, ক্রিপ্টো কারেন্সি লেনদেন এবং ছদ্মবেশী ই-কমার্স বা এমএলএম কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্থপাচারে যুক্ত হয়েছে। মাসের পর মাস এসব প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট কিছু পুল অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক, একমুখী ও সন্দেহজনক লেনদেনের প্রবাহ দেখা যাচ্ছে। এসব লেনদেনের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের অর্থ বাইরে পাচার হচ্ছে।
ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব তাঁর পোস্টে কঠোর ভাষায় সতর্ক করে বলেন, "একটা নির্দিষ্ট পুলের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে বারবার টাকা ঢুকছে। নির্দিষ্ট কিছু নাম্বারে ক্যাশ আউট হচ্ছে, তারপর তা পাচার করা হচ্ছে। আপনি যদি এই কর্মকাণ্ড দেখেও না দেখার ভান করেন, বলার চেষ্টা করেন আপনি জড়িত না—এটা হবে না।"
তিনি আরও উল্লেখ করেন, যারা এখনও অবৈধ অনলাইন জুয়ার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, তাদের এখনই সতর্ক হওয়া উচিত। কারণ আইন পাস হওয়ার পরে দোষী প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি—উভয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
তিনি বলেন, "আমরা মোবাইল ব্যাংকিংসহ সকল ফাইনান্সিয়াল অর্গানাইজেশনকে আগাম সতর্ক করে দিচ্ছি। এখনই সময় সতর্ক হওয়ার, কারণ সাইবার অপরাধ এবং অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে যে অভিযান আসছে, তা হবে ব্যাপক এবং কঠোর।"
বিশেষজ্ঞ মহল বলছে, দেশে অনলাইন জুয়ার বাড়বাড়ন্ত যে শুধু সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তা নয়, বরং বৈধ আর্থিক ব্যবস্থাকেও মারাত্মক ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। অর্থ পাচারের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
সাইবার আইনটি পাস হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক ও ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এর মতো সংস্থাগুলোকেও আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, অনলাইন বেটিং ও জুয়ার বিষয়টি আগে থেকেই বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ থাকলেও, সুনির্দিষ্ট করে সাইবার স্পেসে এর প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য এ নতুন আইনে বিশদ বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এতে অনলাইন ভিত্তিক জুয়া, বেটিং এবং এ সংক্রান্ত আর্থিক অপরাধ দমন সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সরকারের তরফ থেকে বারবার বলা হয়েছে, প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করে দেশের সাইবার স্পেসকে নিরাপদ রাখা এখন সময়ের দাবি। আর নতুন সাইবার সুরক্ষা আইন সেই লক্ষ্যেই একটি বড় পদক্ষেপ হতে চলেছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ