
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, নিরীহ লোককে মামলা দিয়ে হয়রানি করা যাবে না। আইনের অপপ্রয়োগ রোধে পুলিশ বাহিনী কঠোরভাবে সচেষ্ট থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আইজিপি বাহারুল আলম এ মন্তব্য করেন। পুলিশের সর্বোচ্চ পদে আসীন ব্যক্তি হিসেবে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “কেউ যেন হয়রানির উদ্দেশ্যে নিরীহ মানুষকে মামলায় জড়াতে না পারে, সেদিকে আমরা বিশেষভাবে নজর রাখছি।”
আইজিপি জানান, সম্প্রতি বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর থেকে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, একটি মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মূল আসামির সঙ্গে নিরীহ ব্যক্তিদেরও মামলা ভুক্ত করছে। তিনি বলেন, “আমরা এসব ঘটনা সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছি। কোনো নিরীহ নাগরিক যাতে অহেতুক হয়রানির শিকার না হন, সেজন্য পুলিশকে যথাযথ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, পুলিশ প্রশাসন এখন আরও বেশি সচেতন, দায়িত্বশীল ও জবাবদিহিমূলক হতে কাজ করছে। সঠিক তদন্ত ও নিরপেক্ষ অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হবে, যাতে নির্দোষ কোনো ব্যক্তি আইনের অযাচিত শিকার না হন।
এ সময় আইজিপি আগামীকাল মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) থেকে শুরু হতে যাওয়া তিনদিনব্যাপী 'পুলিশ সপ্তাহ-২০২৫' সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, এ বছরের পুলিশ সপ্তাহ হবে একেবারেই ফলপ্রসূ ও কার্যকর—আড়ম্বরহীনভাবে এর আয়োজন করা হচ্ছে। এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, “পুলিশ সপ্তাহের প্রতিটি কার্যক্রম বাস্তবায়ন হবে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা ও অভিজ্ঞতার আলোকে। আমরা চাই, মাঠে কাজ করা কর্মকর্তাদের বাস্তব সমস্যার প্রতিফলন এই সপ্তাহের আলোচনায় উঠে আসুক, যাতে সমাধানও কার্যকর হয়।”
এবারের পুলিশ সপ্তাহের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাদের কাছ থেকেও পুলিশ বাহিনী অভিমত ও পরামর্শ গ্রহণ করবে।
আইজিপি বলেন, “পুলিশ বাহিনী জনতার বাহিনী। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে জনগণের সঙ্গে কার্যকর সংলাপ অপরিহার্য। নাগরিক সমাজের মূল্যবান মতামত আমাদের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম নির্ধারণে দিকনির্দেশক হবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, বর্তমানে পুলিশের ভাবমূর্তি অনেক উন্নত হয়েছে। জনগণের আস্থা বৃদ্ধির জন্য পুলিশ প্রতিনিয়ত তাদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছে। নিরীহ নাগরিকদের হয়রানি বা অনাকাঙ্ক্ষিত মামলা ঠেকাতে পুলিশ প্রশাসনের প্রতিটি স্তরকে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
পুলিশ সপ্তাহের আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাহিনীর অভ্যন্তরীণ শক্তি আরও সুসংহত হবে এবং মাঠ পর্যায়ে জনসেবামূলক কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন আইজিপি।
আইজিপির এসব বক্তব্যের পর, নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি কথাগুলো বাস্তবায়িত হয়, তাহলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা আরও দৃঢ় হবে। তবে বাস্তবতার কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করাই হবে পুলিশের সামনে সবচেয়ে বড় পরীক্ষার মঞ্চ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ